প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে শত শত ট্রাক পেঁয়াজ। তারপর দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজের দর বেশি বাড়তে থাকায় এর প্রভাব পড়ছে আমদানি পেঁয়াজের ওপর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর এ সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসে। এ কারণে দর বাড়ে। দেশি পেঁয়াজের এই ঘাটতি মেটাতে মূল ভরসা হয়ে ওঠে আমদানি পেঁয়াজ। তবে আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে শত শত ট্রাক ঢুকলেও বন্দরে দর বেশি। কারণ, বন্দর এলাকার বাজারে নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসত।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। এ ছাড়া দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্য দেশের পেঁয়াজও দেখা গেছে। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০, তুরস্কের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ এবং চীনা পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দর ৩০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৮ শতাংশ বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, আর কয়েক দিন পর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তবে এর আগ পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে বাজারের অস্থিরতা কাটবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিলি স্থলবন্দরের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেন, বন্দর এলাকায় পেঁয়াজের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই। মূল মুনাফা নিয়ে যান ভারতের রপ্তানিকারকরা। দর বাড়লে তাদেরই লাভ বেশি। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখার একটা কৌশল আছে। সরকার যদি বন্দর–সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করে, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এর পেছনে যুক্তি দিয়ে এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয় ৬০০ ডলারে। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দর পড়ে ৭৩ টাকার মতো। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ ও মুনাফা যোগ করলে পাইকারি পর্যায়ে ৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এর চেয়ে বেশি মুনাফা করলেও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজির দর সর্বোচ্চ ৮০ টাকা হতে পারে। তবে বন্দরেই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। এই পেঁয়াজ ঢাকায় গেলে ১২০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক। জোর তদারকি না থাকায় বন্দর এলাকায় কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা মুনাফা খাচ্ছেন ভারতীয় ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, এখন ভারতে দর বেশি। তবে এখানে আমরা বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজে কমিশনে ব্যবসা করি। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দর বাড়লেও একই কমিশন পাই। আমদানি করা পেঁয়াজের সংকট নেই। শুধু ভারত থেকেই বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে দৈনিক অন্তত ১৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে দেশে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি দুর্বল। এ জন্য বিশৃঙ্খলা চলছে।