সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। আগামী রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
ষষ্ঠী দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৮টা ১ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। যদিও গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
দুর্গাদেবীকে আমন্ত্রণ জানাতে এরইমধ্যে দেশের মন্দিরগুলোতে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
এদিকে টানা চার দিনের সরকারি ছুটি উৎসবের আমেজ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। সরকার নির্বাহী আদেশে আগামী বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেছে।
ছুটি ঘোষণা করে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ এবার দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি হতে যাচ্ছে। পরদিন রোববার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ছুটি থাকছে।
দুর্গা বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
‘মহা চণ্ডীতে’ উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রামচন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রামচন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ মহাষষ্ঠী, আগামীকাল মহাসপ্তমী, শুক্রবার মহাষ্টমী, শনিবার মহানবমী এবং রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
এদিকে মন্দিরে নিরাপত্তা দিতে একটি কন্ট্রোলে রুম খুলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এখানেই আয়োজন করা হয়েছে মহানগর কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপের।
পূজামণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে যান বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এবার সারাদেশে কম-বেশি সাড়ে ৩১ হাজার মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। এসব মণ্ডপে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নেই। পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা দিতে প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পূজামণ্ডপে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পূজার আগে আমরা প্রতিটি জায়গায় টহল বাড়িয়েছি। ইতোমধ্যে আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন করা হয়েছে। বোধন এবং ষষ্ঠীপূজা থেকে সব পূজামণ্ডপে আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছে তারাও পূজার দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সবসময় কাছাকাছি দূরত্বে থাকবে। আনসার বাহিনীর সঙ্গে ভলানটিয়ার রয়েছে তারাও কাজ করছে। এতে করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপতৎপরতার সুযোগ নেই।
৫ দিনব্যাপী আয়োজনে যখন যা হবে
গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। তবে উৎসব শুরু বুধবার (৯ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে। পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের শেষ হবে দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় আর স্বর্গে গমন করবেন ঘোড়ায় চড়ে।
মন্দির সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ অক্টোবর (২৪ আশ্বিন) সকাল ৮টা ১ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে থাকবে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ; ১০ অক্টোবর (২৫ আশ্বিন) সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে। এরপর হবে বস্ত্র বিতরণ; ১১ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন) সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজার কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা সন্ধিপূজা আরম্ভ সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে। এরপর মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে; ১২ অক্টোবর (২৭ আশ্বিন) সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা এবং সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় হবে আরতি প্রতিযোগিতা; ১৩ অক্টোবর (২৮ আশ্বিন) দুপুর ১২টায় হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিকেল ৪টায় বিজয়া শোভাযাত্রা।