শিশুবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনসহ ১৭ দফা দাবি

ধর্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে শিশুবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনসহ ১৭ দফা দাবি জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ৫টি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যৌন নির্যাতন, বিপজ্জনক শ্রম, অবহেলা ও অনলাইন সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা। বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কোথাও নিরাপদ নয় শিশুরা। তাদের অধিকার নিশ্চিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর নয়। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

রবিবার (১৬ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত ও কার্যকর বিচারের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক আব্দুল্লাহ-আল মামুন, প্লান ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্সের পরিচালক (কর্মসূচি ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)’র তামান্না হক রীতি ও মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশনের নিশাত সুলতানা।
লিখিত বক্তব্যে শাহীন আনাম বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা বা হত্যা চেষ্টা, আমাদের ভীষণভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এই সংকট শুধু শিশুদের জীবনকেই ধ্বংস করছে না, বরং সমাজের মূল ভিত্তিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। মেয়ে শিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে। যা সারাদেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। এই প্রতিবাদের সঙ্গে আমরাও একাত্মতা ঘোষণা করছি।

তিনি আরো বলেন, বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য সরকারের কাছে একাধিকবার দাবি জানানো হয়েছে। অপরাধীরা প্রায়শই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এর সবচেয়ে মর্মান্তিক উদাহরণ হলো ২০১৬ সালে ৫ বছর বয়সী একটি শিশুকে নির্মমভাবে ধর্ষণের দায়ে কয়েক বছর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন অপরাধীর সাম্প্রতিক জামিন। শিশু আছিয়া ধর্ষণ মামলার দ্রুত ও যথাযথ তদন্ত, বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

শিশুদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শাহীন আনাম বলেন, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহায়তা ও সমর্থন শিশুদের প্রয়োজন। আমরা চাই সরকার অনতিবিলম্বে শিশুদের সমস্যাগুলোকে অগ্রাধিকার দিক, বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবারের শিশুদের। বর্তমান পরিস্থিতি জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করে, তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। শিশুর প্রতি যে কোনো নির্যাতন ও সহিংসতা তার মনে এতটাই গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলে যে তার স্বাভাবিক বিকাশ ও মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণের পথ রুদ্ধ হয়। এটা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ আমাদের সবার উপলব্ধি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, শিশু ধর্ষণের মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক। শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষাবিষয়ক একটি সংস্কার কমিশন জরুরি ভিত্তিতে গঠন করা হোক, যা সব অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো তা প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর করবে। একইসঙ্গে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মতো একটি শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করা হোক, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করবে। শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হোক।