শুল্ক প্রত্যাহারের পরও দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চিনির দামে প্রভাব পড়ছে না। উলটো চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি মন (৩৭.৩২ কেজি) চিনিতে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কেজিপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এছাড়া বেড়েছে ভোজ্যতেল, মুরগি ও চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে।
অভিযোগ উঠেছে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা। আগস্টের শুরুতে সরকার বদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণ ও কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে আসে। এরপরও বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সবজির দাম এখনও আকাশচুম্বী। তবে কিছুটা কমেছে আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চিনি পরিশোধনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চিনির দাম বাড়ছে বলে খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক জানিয়েছেন। পাইকারিতে প্রতি মন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। ৩ দিন আগেও এই চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। অপরদিকে নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খোলা সম্ভব না হলে চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে-এসব কারণেও বাড়ছে চিনির দাম।
বুধবার চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নেয় সরকার। অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। রেগুলেটরি ডিউটি ১৫ শতাংশ হ্রাসের মাধ্যমে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ক কর ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ক কর ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমানো হয়।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার কামরুল হাসান জানান, পাইকারি বাজারে চিনির চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ মেটাচ্ছেন ডিলাররা। সরবরাহ ঘাটতির কারণে এক সপ্তাহ ধরে চিনির দাম বাড়ছে। তার মতে, দেরিতে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ায় চিনি পরিবহণের জন্য আসা ট্রাকগুলোকে মিল গেটে ২ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর ফলে চিনির দামের সঙ্গে এই বাড়তি পরিবহণ ব্যয়ও যোগ করা হচ্ছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চিনির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কী কারণে বাড়িয়ে দিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা জানেন না। পাইকারি বাজারে এখন প্রতি মন ভোজ্যতেল বিক্রি হয় সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকায়। খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা দরে। কয়েকদিন আগেও ভোজ্যতেলের দাম ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। একইভাবে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বেড়েছে। বেড়েছে মোটা চালের দামও। মোটা চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিমের খুচরা মূল্য ১৪২ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতি ডজন বাদামি রংয়ের ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১৬২ টাকা ছিল। এছাড়া মুরগির দামও বেড়েছে। সরকার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, যা ৭ দিন আগেও ১৮০ টাকা ছিল।
বাজারদর : সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বাজারে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। কেজিপ্রতি ১০০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি মিলছে না বললেই চলে। নগরীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে-বরবটি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৯০-১০০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, টমেটো ২২০-২৪০ টাকা, পটোল ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে শসা ৭৫-৮০ টাকা, শিম ১৮০-২০০ টাকা, বাঁধাকপি ৬৫-৭০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩৮০-৪০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, বিলেতি ধনিয়া পাতা ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, পাইকারিতে দাম কমায় খুচরায়ও কমেছে পেঁয়াজের দাম। তবে পাইকারিতে আদা-রসুনের দাম কমলেও খুচরায় বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এই দুই পণ্য। পেঁয়াজ ১০০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা ও আদা ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। নগরীতে লইট্টা ১৮০-২০০ টাকা, পাঙাশ ও তেলাপিয়া ১৮০-২৪০ টাকা, নারকেলি ২০০ টাকা, কাতল ৩২০-৩৫০ টাকা, রুই ৩৫০-৩৮০ টাকা, পোয়া ৩০০ টাকা ও পাবদা ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।