পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান রাশেদ মাকসুদ কমিশন কোনভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না।অনাস্থায় পতনের কবলে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। বাজারের পতন এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে নেমেছে যে লোকসান এড়াতে ভালো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েও বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের ১০ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৫৩৩ পয়েন্টে ছিল। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ বছর পর সূচক আবারও ৪৭০০ পয়েন্টের নিচে নেমে গেলো। সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে।
আরও পড়ুনঃশেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন, ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক
সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি এখন শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস, স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাতে এসব প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে ধারিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং দিন দিন বিনিয়োগকারী কমেই যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। মুলত গত বছরের ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব নেওয়ার পর যতই দিন যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। তেমনি মাকসুদ কমিশন এখন পর্যন্ত এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। গত ৮ মাস যাবৎ রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করলেও অর্থ উপদেষ্টা এর আসকারায় রাশেদ মাকসুদ ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সংস্কারের নামে শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রাখতে বর্তমান কমিশন সব ধরনের আয়োজন করে রেখেছে বলেই অভিযোগ তুলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (২৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৬২ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে।
এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ‘ডিএসইএস’ ১৬ দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমে ১০০৮ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ১৫ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে ১৭০৮ পয়েন্টে অবস্থান করেছে। আজ ডিএসইতে ২৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিলো ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ২৯৫ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর ছিলো অপরিবর্তিত।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পতন শুধুই অর্থনৈতিক সূচকের নয়, এটা নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। বিনিয়োগকারীদের আস্থার অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে বাজারে ইতিবাচক খবরে কোনো সাড়া নেই, নেতিবাচকে হাহাকার।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।