শেয়ারবাজারে বড় ধস সাড়ে৪ বছর আগের অবস্থানে সূচক

নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধস নেমেছে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বুধবার মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। সেই সঙ্গে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের গতিও।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক লাফে ১৪৯ পয়েন্টের বেশি কমে গিয়ে নেমেছে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টেÑ যা গত সাড়ে ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৪ হাজার ৮০৯ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এ ধসের অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এবং যুদ্ধের ধামামা পরিস্থিতিকে আরো গভীরতর করে তুলেছে। তারা বলছেন, ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আতঙ্ক ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আগে থেকেই পতনের ধারায় থাকা দেশের শেয়ারবাজার এখন তলানিতে রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ফলে লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।
লেনদেনের শুরুতে দেখা দেয়া এই পতনের ধারা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পতনের মাত্রাও বাড়ে। এতে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে মাত্র ৯টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৮৫টির। আর ৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ১টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ২১৫টির দাম কমেছে। আর ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া ৪টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৭৯টির দাম কমেছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির এবং ১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডেরই দাম কমেছে। এভাবে ঢালাও দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৯৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। অবশ্য লেনদেন ৫০০ কোটি টকার বেশি হয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৯১ টাকার। ৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ফাইন ফুডস, বারাকা পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির এবং ১০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।