সংকটে আবাসন ও লিংকেজ লিল্প

#ড্যাপের প্রভাব

ড্যাপকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে দেশের আবাসন খাত। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম এই খাতে এখন চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে কোন বিনিয়োগ হচ্ছে না। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা আবাসন শিল্পকে গতিহীন করে দিয়েছে। বৈষম্যযুক্ত ড্যাপ সংশোধন হবে এমন আশায় ছিলেন জমির মালিক এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠির ইন্ধেনে পরিকল্পনাবিদদের বাঁধার/আপত্তির তা আটকে গেছে৤ মুখে গত ১৯ মারচ উপদেষ্টা বুধবার ড্যাপের সংশোধনী চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে এ সংশোধনের বিষয়ে একমত হতে পারেননি সবাই। ফলে ৭ সদস্যের কমিটি ওইদিনের বৈঠকে ড্যাপ পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।


রাজউক বলছে, ২০২২ এর গেজেটেড ড্যাপে উল্লেখিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) এর মান নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তি থাকায় সে বিষয়ে সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়ে সংশোধনের জন্য যে প্রস্তাবনা তোলা হয়েছিলো সেগুলোর পর্যালোচনা করতে আরও কিছু সময় নিবে উপদেষ্টারা।

উল্লেখ্য অর্থনীতি আবাসন খাতের বড় অবদান রয়েছে৤ আবাসন খাতকে ঘীরে তিন শতাধিক এর উপরে লিংকজ শিল্প রয়েছে৤ আবাসন খাতে স্থবিরতা থাকায় কমে গেছে রড, সিমেন্ট ইটসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন৤ উৎপাদন কমে যাওয়াতে অনেকেই লোকবল ছাঁটাই করছে৤ আবাসন খাতের অনেক কম্পানি পরিচালন খরচ মেটাতে লাভ না করেই প্লট ও ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছে। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা গ্রাস করছে শিল্পটিকে। কমবেশি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে দেশের আবাসন খাতে। কিন্তু জনগণের মৌলিক চাহিদা স্বপ্নপূরণের এই ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত আজ ধুঁকছে।
দেড় বছর আগে মূলত রড ও সিমেন্টের মতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ড্যাপ-এর কারণে ফ্ল্যাটের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে আবাসন খাতে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা কমে গেছে। একই সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণের কাজেও স্থবিরতা চলছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় আট মাস ধরে ফ্ল্যাটের বিক্রি কম থাকায় অনেক ছোট প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন ও অফিসের ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

দেশের ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ সব সময় আবাসনে বিনিয়োগ করে থাকে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আত্মগোপনে। নতুন ড্যাপের কারণে ২০২৩ সাল থেকেই নতুন প্ল্যান পাস করানো বন্ধ রাখেন উদ্যোক্তারা। ফলে এ সময়ে যে পরিমাণ প্রকল্প হওয়ার কথা ছিল, সেই রকম হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের সাবলীলতা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য নিবন্ধন ফি, ভ্যাট-ট্যাক্স উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে হবে। দেশের সচেতন অনেক নাগরিক বলছেন, এই ড্যাপ দেশের প্রচলিত জলাধার আইন এর পুরোপুরি পরিপন্থী। বিগত সরকার এর অনেকে জেনে বুঝেই কিছু নদীখেকো ব্যবসায়ী ব্যক্তির জন্য দেশ বিরোধী এ অন্যায়টিকে ছাড় দিয়েছিলো৤ এ বাদেও এই গেজেট হওয়া ড্যাপে কৃষি জমিতেও নির্মাণ এর জন্য অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে৤ পরিকল্পিত কিছু এলাকা বাদে এ ঢাকা মহানগরীর সকল এলাকার জমি আবাসিক এর সাথে মিশ্র ব্যবহারের অর্থাৎ বাণিজ্যিক সহ অন্যান্য ব্যবহার অনুমতি দিয়েছে৤ এর ফলাফল যে কি হবে আগামীতে নগরবাসী তা প্রত্যক্ষ্য করবেন৤
গেজেটকৃত এ ড্যাপে এলাকা ভিত্তিক জনঘনত্ব নিরূপণে বেশ অসঙ্গতি রয়েছে, এলাকা এফ.এ. আর সূচক নির্ধারণে অনেক বৈষম্য রয়েছে৤ অনেক এলাকায় ভবনের উচ্চতা অনেক কম দেয়া হয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকার জমি শেষ হয়ে যাবে। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। দুই বছরে বাড়ি ভাড়া ইতোমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জন্য বাড়ছে সাবলেট। ড্যাপের মাধ্যমে ঢাকা থেকে নাগরিকদের বের করা চেষ্টা হলেও সেটা সম্ভব নয়।

  • মরিয়ম সেঁজুতি