ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশের সরকার পতন হয়। এরপর দেশে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়; যার প্রভাব পোশাক শিল্পেও পড়ে। ফলশ্রুতিতে এ শিল্প খাতে উৎপাদন ও বিপণনে বিঘ্ন ঘটে। পরিচালনা পর্ষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগীতায় অবস্থা অনুকুলে নিয়ে আসলেও হঠাৎ করে সরকারকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী স্বীয় স্বার্থ হাসিলে নির্বাচিত প্রতিনিধি পর্ষদকে বাদ দিয়ে বিজিএমইএতে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়; যা বিজিএমইএর ৩৫ বছরের গৌরবোজ্জল ইতিাহসে কখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা।
তৈরী পোশাক শিল্পের বর্তমান দুরবস্থার প্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে বিজিএমইএ’র সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। প্রায় ২০০ জন সাধারণ সদস্যদের উপস্থিডুতে অনুষ্ঠীত সভায় সভাপতিত্ব করেন- বিজিএমইএ’র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি এস.এম. নুরুল হক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বিজিএমইএ’র সহায়ক কমিটির সদস্য এমডি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিজিএমইএ’র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি সর্বজনাব এরশাদ উল্লাহ, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
সভায় বিজিএমইএ’র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ বলেন, কিছু স্বার্থান্বেসী মহল মহল বিজিএমইএ নির্বাচিত বোর্ড বাতিল করে সরকারকে চাপে ফেলে তদবির করে প্রশাসক এর নামে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেন। প্রশাসক ১ম সভাতেই সেই স্বার্থান্বেসী মহলের কাছ থেকে ৪-৫ পাতার একটা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে পরবর্তী তদবিরে সেই নীল নক্শা অনুযায়ী যাবতীয় কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে কি সরকার সংস্কারক (কিছু স্বার্থন্বেসী মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য) করে পাঠিয়েছে, নাকি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত কমিটির কাছে হস্তান্তর করার জন্য। এর বাইরে তার ক্ষমতা বা দায়িত্ব হচ্ছে বিজিএমইএ এর সাধারন দৈনিন্দন কাজ পরিচালনা করা। কিন্তু বাস্তবে সে তার আওতার বাইরে গিয়ে কাজ করছে, যা আইনের পরিপন্থি। তিনি আরো বলেন, তার সর্বশেষ বেআইনি অপকর্ম হচ্ছে সদস্যপদ নবায়নের জন্য কল- কারখানা নবায়নকৃত লাইসেন্স চাওয়াÑ এ বিষয়ে অধিদপ্তরকেও অবহিত করা। তাকে এ ক্ষমতা কোন বিশেষ সাধারন সভায় সদস্যরা মেন্ডেট দেননি।
তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে লজ্জার বিষয় এ সার্কুলারে বাতিল হয়ে যাওয়া (১৯৬৫ সালের কারখানা আইন) একটা আইনের উল্লেখ করেছে যেটা মহাসচিব (যিনি একজন প্রাক্তন এডিশনার সেক্রেটারি) সই করেছেন ওনাদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা ল’ ফার্মের সুপারিশে।
বিজিএমইএদর সদস্যপদ নবায়ন প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি ও অনুষ্ঠানের সভাপতি এস.এম. নুরুল হক বলেন, বিজিএমইএ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত একটি বাণিজ্য সংগঠন। এটি পরিচালিত হয় বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-১৯৯৪ ও সংগঠনের নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী। এক্ষেত্রে ঋধপঃড়ৎরবং অপঃ ১৯৬৫, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত কোন বাণিজ্য সংগঠনের জন্য প্রযোজ্য কিনা? যদিও আইনটি ব্রিটিশ আমলে করা, অনেক পুরানো।
বিজিএমইএ’র সদস্য হবার জন্য চৎড়পবফঁৎব ভড়ৎ ইএগঊঅ গবসনবৎংযরঢ়- এ দেখা যায় শুধুমাত্র চৎড়ারংরড়হধষ গবসনবৎংযরঢ় এর ক্ষেত্রে ১৯ নং ংবৎরধষ এ উওঋঊ এর সার্টিফিকেট এর কথা বলা আছে। অন্য কোন ক্ষেত্রে কিছু বলা নেই। যদিও চৎড়পবফঁৎব ভড়ৎ ইএগঊঅ গবসনবৎংযরঢ়- এ বর্ণিত জবয়ঁরৎবফ উড়পঁসবহঃং গুলো কোন ইড়ধৎফ মিটিং এ বা অএগ/ঊএগ, ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক অঢ়ঢ়ৎড়াবফ করার কোন রেকর্ড নাই। ২০১৮ সাল থেকে চলছে।
বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-১৯৯৪ ও বিজিএমইএ’র নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধির কোথাও সদস্য পদ নবায়নের ক্ষেত্রে উওঋঊ এর সার্টিফিকেট লাগবে এমন কিছু বলা নেই। এমনকি ১৯৮৩ সালে বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সদস্য পদ নবায়নের ক্ষেত্রে উওঋঊ এর সার্টিফিকেট লাগবে এমন কোন সার্কুলার ও বিজিএমইএ থেকে জারি করা হয় নাই।
সদস্য পদ নবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি সারা বছর জুড়েই হয়। এক্ষেত্রে ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া কোন ভাবেই সমীচীন নয়। বিজিএমইএ’র সদস্যগণ সারা বছর তাদের সুবিধাজনক সময়ে সদস্য পদ নবায়ন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কোন সদস্য যদি ডিসেম্বর মাসে বিজিএমইএ’র সদস্য পদ প্রাপ্তি হয় তাহলে সে কেন আবার ৩১ শে জানুয়ারীর মধ্যে সদস্য পদ নবায়ন করবে। সে তো ১ বছর পর তার সদস্যপদ নবায়ন করবে।
বাণিজ্য সংগঠন আইন- ২০২২ এর ধারা ১৮, ২ নং উপধারা খ কলামে প্রশাসকের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য- এর ক্ষেত্রে বলা আছে- প্রশাসক তাহার মেয়াদের মধ্যে নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিমিত্ত নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড গঠন করিতে পারিবেন। নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড ই নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যতয় ঘটিতেছে।
বিজিএমইএ’র প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বলেন- বর্তমানে আমাদের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি সীমাহীন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাজ গুলো স্থবির হয়ে আছে, সমস্যা বেড়েই চলছে। সমস্যাগুলো আমাদের সকলের। সমাধানের জন্য প্রয়োজন নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা বিজিএমইএ পরিচালনা করা। এ’বিষয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন রাখেন- প্রশাসক কেন নিয়োগ হলো তা আমরা জানিনা। প্রশাসক আবার সহায়ক নিয়োগ দিলেন কিন্তু আমরা হয়ে পড়েছি অসহায়। আমরা কারখানা চালাতে পারছি না। এ’ভাবে চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। গত ২৬/১২/২০২৪ইং তারিখে সদস্যপদ নবায়ন সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিটি অভিলম্বে বাতিল করার জন্য জোড় দাবী জানান। অন্যথায় আইনের সহযোগিতাও নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি অতিদ্রুত নির্বাচনের দাবীও জানান।
বিজিএমইএ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের উল্লেখিত বক্তব্যসমূহের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে উচ্চ কণ্ঠে বলেন- দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের প্রাণের রপ্তানীমুখী তৈরী পোশাক শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে যতদ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে এসোসিয়েশনের ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এ শিল্পকে রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরী। পিঠ আমাদের দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে চট্টগ্রাম থেকে পোশাক শিল্পের সূচনা, যে চট্টগ্রাম থেকে শিল্প সম্পর্কিত ন্যায্য দাবী আদায়ের গর্জন উঠেছে সেই চট্টগ্রাম থেকেই আবারও প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে স্বশরীরে হাজির হবো।