বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নির্বাহী কমিটি ব্যাংক খাত লুট ও বিদেশে লক্ষ্য কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এডহক কমিটির সভাপতি ড. মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ড. খলীকুজ্জামান, ড. আবুল বারকাত, ড. আইনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রোবিধি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংক খাত লুট করেছে এবং বিদেশে টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে আরেক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য দপ্তর মোস্তফা সাইফুল আনোয়ার বুলবুল সমিতির গেট বন্ধ দাড়িয়ে থাকে। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বাদানুবাদ। অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই এডহক কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমানের দল ভবনে প্রবেশ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসে তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সেখানে মৌলিক কথপোকথনেই পরাজিত হয়ে অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর টিমের সবাই সরে যায়। তর্কবিতর্কের শেষ পর্যায়ে পুলিশ ভবনের নিচতলায় প্রবেশ করে উশৃংখলকারীদের বের করে সড়কে নামিয়ে দেয়। এরপর ফ্লোরে দাড়িয়েই সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন ড. মো. আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, গত আগস্ট মাসের ৩ তারিখে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে গণহত্যার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে অর্থনীতি সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে আমরা যারা সম্পৃক্ত ছিলাম, তাদের আচরণ দেখে আমাদের গায়ে আগুন ধরে গেছে। আমরা তাদের বলেছি আপনাদের এই মুহূতে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ এই দেশের ৮ হাজার অর্থনীতিবিদ তাদেরকে আপনারা খুনের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের এখানে থাকার আর কোনো এখতিয়ার নেই। সেই দিন থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এরপর আমরা ৫১ সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করেছি।
ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, তারা ১৬ বছর ধরে এই সমিতির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমাদের এডহক কমিটির লক্ষ্য একটা স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এজন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের কমিটি করার তিন মাস পর ৩১ ডিসেম্বর তারা অন্তর্বর্তীকালীন একটি কমিটি করেছে। সেই কমিটিতে ১০ জন আছে চিহ্নিত আওয়ামী লীগের দোসর, ৪ জন স্বৈরশাসনের আমলের কমিটির সদস্য, একজন আছেন ভারতের র এর এজেন্ট, একজন আছেন ড. আবুল বারাকাতের আত্মীয়। তাদের লক্ষ্য আবার একটা প্রহসনের নির্বাচন করে বারকাত-খলীকুজ্জামানের লোকদের ক্ষমতাসীন করা। আমরা সেটা বাধা দিয়েছি।
তিনি বলেন, গত ১২ তারিখে আমরা সমিতি দখলমুক্ত করে আজ (সোমবার) সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছি। কিন্তু সেই কমিটির সদস্য দপ্তর মোস্তাফা সাইফুল আনোয়ার বুলবুল সকালে ৩০-৪০ জন্য লোক নিয়ে এসে আমাদের কেয়ারটেকারকে (ইব্রাহিম) মেরে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ দায়ী বুববুল।
প্রসঙ্গত, বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে পৌঁছায়। অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান সাথে সেই মিছিলে যোগ দেয় স্থানীয় থানা বিএনপির আহ্বায়ক ছাড়াও বেশ কিছু বিএনপির নেতারা। সেখানে অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য দপ্তর মোস্তফা সাইফুল আনোয়ার বুলবুল সমিতির গেট বন্ধ দাড়িয়ে থাকে সেখানে। দু’পক্ষের শুরু হয় মারমুখী বাদানুবাদ। এরপর আজিজুর রহমানের দল ভবন প্রবেশ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসে তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে সেখানে মৌলিক কথপোকথনেই পরাজিত হয় অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর দল।
৪/সি, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায় বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলো বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আজিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনের বিষয় ছিলো- বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অফিস দখলমুক্তকরণ এবং বিদেশে টাকা পাচারে সহায়তাকারী ও খেলাপী ঋণ দিয়ে ব্যাংকখাত ধ্বংসকারীদের মুখোশ উম্মোচন। তবে আগে থেকে এই তথ্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী কমিটির লোকজন অর্থনীতি সমিতির ভবনে লোকজন নিয়ে দুপুরের খাবারের আয়োজন করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এডহক কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনের দুই ঘন্টা আগেই সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়।