তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করছে সিরাক বাংলাদেশ

রূপকল্প-২০৪১ অনুসারে বর্তমান সরকার সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণকে বাংলাদেশে ৪র্থ স্বাস্থ্য খাত কর্মসূচির অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবেও ধরা হয়। অথচ বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই তরুণ। এই জনগোষ্ঠীন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণায় কাজ করছে সিরাক বাংলাদেশ।

দুই বছর মেয়াদে ‘নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতা উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ হিসেবে রোববার আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর কাওরানবাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিরাক-বাংলাদেশ।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার সংগীতা সরকার। তিনি জানান. সেইফ এবরশন একশন ফান্ড ও ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) সহযোগীতায় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোণা সদর উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০% বেড ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এ সচেতনতা তৈরীকরণ কার্যক্রম চলছে। তিনি আরো জানান, ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চলতি বছরের মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২৮৫জন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, ৭৭জন প্যাক সেবা ও দুই হাজার ৫৫৭ জন পরিবার পরিকল্পনা, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত রোগীদের জন্য ১০% বেড, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ হিসেবে ১০% বিনামূল্যে বেড এবং ১৯৬ জনক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।

এসময় জানানো হয়, বাংলাদেশের তরুণরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উদ্ভাবনসহ নানামুখী উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তাই এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য তরুণদের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ জরুরী। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৭ এ উল্লেখ রয়েছে, প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা আমাদের মানবাধিকার। তরুণদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার তথা মানবাধিকার অর্জিত না হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। তাই তাদের কৈশোরকালের শুরু থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
সরকার ‘জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্র ২০১৭-২০৩০’ প্রণয়ন করেছে যেন কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত হয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ এর সংশোধনী অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০% বেড এবং চিকিৎসা সেবা সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সেবা প্রদান নিশ্চিত করণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহিল আজম সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সকল রিসোর্সকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাক-বাংলাদেশের এই উদ্যোগ প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অসহায় জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (আইইএম) ও লাইন ডাইরেক্টর (আইইসি) মীর সাজেদুর রহমান ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের এমআইএস সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে রিপোর্ট জমা দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

স্বাগত বক্তব্যে সিরাক বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকত বলেন, ‌’আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই। প্রাপ্ত তথ্যগুলো ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে, যা একটি দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজে আসবে।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস ইউনিট) ডা. মো: সুলতান আহমেদ। সিরাক-বাংলাদেশ এর উপপরিচালক (প্রোগ্রাম) মো. সেলিম মিয়ার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, লাইন ডাইরেক্টর (এমসিআরএইচ) ডা. শামীম মোঃ আকরাম, লাইন ডাইরেক্টর (ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারী ইউনিট) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল, পরিবার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ডাঃ জেবুন নেছা রহমান, পরিবার পরিকল্পনা, ময়মনসিংহ এর বিভাগীয় পরিচালক মতিউর রহমান, উপপরিচালক মাজহারুল হক চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা, নেত্রকোণা উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) খন্দকার আরিফুজ্জামান, নগর মাতৃসদন স্বাস্থকেন্দ্র সদর, ময়মনসিংহ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, নগর মাতৃসদন স্বাস্থকেন্দ্র সদর, নেত্রকোণার প্রজেক্ট ম্যানেজার শেখ মঈন উদ্দীন প্রমূখ।