সচেতন না করে ভ্যাট বাড়িয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণচেষ্টা ব্যর্থ : প্রেসসচিব

#প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ন্যূনতম ১ টাকা করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকবিরোধী সংস্থাগুলো সামাজিক সচেতনতা না বাড়িয়ে এনবিআরকে ভ্যাট বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তামাক ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করেছে, যা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। ট্যাক্স বাড়িয়ে সিগারেটের ব্যবহার কমানোর ধারণা কাজ করছে না বলেও জানান তিনি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালায় প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন। বক্তারা আগামী অর্থ বছর নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেট এক করে নতুন স্তরে প্রতি সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৯ টাকা করার সুপারিশ জানান।

বেসরকারি সংস্থা ডরপ ও ইআরএফ এর যৌথ আয়োজিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ডরপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এ এইচ এম নোমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা। ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপ এর উপ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। বক্তব্য রাখেন এনবিআর এর সদস্য (ভ্যাট) ড. আব্দুর রউফ, সিটিএফকে’র ড. আতাউর রহমান মাসুদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম বলেন, দেশের নারীদের মধ্যে ধূমপান প্রবণতা বাড়ছে। এটি চিন্তার বিষয়। তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধি নিয়ে ক্যাবিনেট ডিভিশনে আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যে কিভাবে বিষয়টি দেখলে সরকার-জনমানুষ সবার জন্য উপকারী হয়। এছাড়াও আপনাদের প্রস্তাবনা আমি ক্যবিনেট ডিভিশনে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করব।

প্রেস সচিব বলেন, তামাকের ব্যবহার কমাতে সবাই শুধু এনবিআর এ লবিং করে, এক্টিভিস্টরা কর বাড়াতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে-কিন্তু এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশের ওর স্যালাইন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ যুদ্ধ বন্ধে সহায়তা করছে।

হঠাৎ করে তামাক উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব নয় এমন মন্তব্য করে প্রেস সচিব আরো বলেন, তামাক চাষিদের বিকল্প চাষের সুযোগ নাই। কেবিনেটে তামাক ব্যবহার কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, এই অর্থ বছরে সিগারেটের মূল্য যা বাড়ানো হয়েছে তা গত ২৪ বছরেও হয়নি। সিগারেটের মূল্য বাড়িয়ে তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা বলেন, সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরে তামাক বিরোধী নাগরিক সংগঠনের প্রস্তাব মতে কার্যকর করারোপ করা গেলে অন্তত ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রাজস্ব আয় করা সম্ভব হতো। তাই প্রস্তাবনা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ানো গেলে সিগারেটের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার (৬৭ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখেই আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত সিগারেট কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশের দেশের স্বাস্থ্যখাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জটিল কর ব্যবস্থার কারণে অন্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর তুলনায় সিগারেটের দাম বাড়ানো নগণ্য। উদাহরণস্বরূপ সর্বশেষ তিন অর্থবছরে সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩শতাংশ। এতে গড়ে সিগারেট বিক্রি বেড়েছে বছরে ৪ শতাংশ হারে। ইতিবাচক বিষয় হলো চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সকল স্তরের সিগারেটর ওপর সমান ৬৭ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সিগারেট বিক্রির সিংহভাগ প্রায় ৯০শতাংশ নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের দখলে রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাথাপিছু সিগারেট বিক্রি বিগত বছরগুলোতে প্রায় একইরকম থাকলেও এই দুই স্তরে সিগারেট বিক্রি বেড়েছে। আসন্ন অর্থবছরে নিম্ন ও মধ্যম- এই দুটি স্তরকে একত্রিত করে এই নতুন তিন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটির দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা, ১৪০ টাকা, ও ১৯০ টাকা ধার্য করতে হবে। এই প্রস্তাবনা আগামী বাজেটে প্রতিফলিত করা গেলে প্রায় ১৭ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৮ লক্ষ ৭০ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্প-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাজারে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ, ও অতি উচ্চ- এই চার স্তরের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ভরপ বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।