#নবম লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোতে শুরু
পরিবেশবান্ধব ট্যানারি ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প আন্তর্জাতিক রপ্তানিতে নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ই হবে এ শিল্পের টেকসই অগ্রগতির চালিকাশক্তি।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শুরু হওয়া নবম বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপো-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীতে নবমবারের মতো ‘বাংলাদেশ চামড়া ও জুতা শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী’ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) যৌথ আয়োজনে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (আইসিসিবি) শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে তিন দিন।
বিটিএ’র সঙ্গে এবারের মেলার যৌথ আয়োজক হিসেবে রয়েছে লেদার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টস সোসাইটি, লিমরা ট্রেড ফেয়ার অ্যান্ড এক্সবিশনস। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তিন দিনের এ মেলার পর্দা নামবে শনিবার।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চামড়া শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত। এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করছে। তিনি জানান, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও ফুটওয়্যার খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং ১২.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের উৎপাদন ও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘চামড়া শিল্পে মূল্য সংযোজনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ তৈরির সুযোগ ব্যাপক। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিল্প উপদেষ্টা মাইলস্টোন কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এক্সপো নিয়ে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, এই মেলা উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক ও বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সেতুবন্ধন তৈরি করবে। যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। তিনি এ শিল্পে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং দক্ষ জনবল গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব বেবী রানী কর্মকার, বিটিএ-এর সেক্রেটারি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান এবং ট্যানারি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলী বাপ্পী।
তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে ১৪টি দেশের বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় মোট ১৪৮টি স্টল রয়েছে। এতে আধুনিক ট্যানিং ও ফিনিশিং মেশিনারিজ, উন্নতমানের চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে। আয়োজকরা বলছে, এবারের আয়োজনে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক জুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, জুতা, ব্যাগ, স্পোর্টসওয়্যার, লেজার কাটিং যন্ত্রপাতি, চামড়াজাত পণ্য ও তৈরির যন্ত্রপাতি, এসব পণ্য বুনন ও প্রস্তুতকারী যন্ত্রপাতি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপাদন লাইন, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা তৈরির বিভিন্ন ধরনের উপকরণ, চামড়া, সিন্থেটিক বা কৃত্রিম চামড়া, চামড়াজাত পণ্য তৈরির রাসায়নিক উপকরণ ইতাদি পণ্যের পসরা বসেছে।
বিটিএ জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ২২০টির বেশি ট্যানারি রয়েছে, যেখানে আড়াই হাজারের বেশি জুতা উৎপাদনের ইউনিট রয়েছে। এছাড়া ৯০টির বেশি বৃহৎ কারখানা রয়েছে, যারা চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন ও এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। আয়োজকদের ভাষ্য, এবারের মেলায় দেশি-বিদেশি ২৫০টির মতো কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নেটয়ার্কিং বাড়ানোই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।