‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংস্কার বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ওপর পড়বে’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে ৪ বা ৫ বছর দায়িত্বে থাকা প্রয়োজন। ‘১৮ মাস বা দুই বছরে সংস্কারের বেশির ভাগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন , ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সরকার যেসব সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ওপর পড়বে তার ওপরে।’

বুধবার রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান ২০২৪’ এ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদ।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশে গত এক দশকে ক্ষমতাসীন দলের হাতে ভোটের অধিকার অন্যায়ভাবে খারিজ হয়েছে। তারা আইনের অপব্যবহার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজন না করে নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করার মাধ্যমে এই অধিকার খারিজ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনী গণতন্ত্র তা–ও কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নানা ত্রুটিতে পড়ে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ক্রমশ ধনী ব্যক্তিদের খেলায় পরিণত হয়।’

তিনি আরও বলেন, যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তা থেকে ধারণা পাওয়া যায় কোন বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও অর্থনীতি। ন্যায়সংগত সমাজ তৈরিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আন্তরিক হলে এই লক্ষ্য সামনে আনা যেতে পারে। এমন একটি সম্ভাবনা আমার রোমান্টিক কল্পনার অংশ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কে স্বপ্ন দেখেছিল যে আমাদের আজ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে একটি সরকার থাকবে এবং বৈষম্য দূর করার জন্য সংস্কারের কথা বলা হবে।’

রাজনৈতিক অবিচার প্রসঙ্গে অধ্যাপক সোবহান বলেন, ‘অভ্যাসগতভাবে, এটি ক্রমবর্ধমান একটি ধনী ব্যক্তিদের খেলা হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে, আমরা রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব বৃদ্ধি, ব্যবসার একটি হাতিয়ার হিসাবে রাজনীতির উত্থানকে প্রত্যক্ষ করেছি। ধারাবাহিক সংসদগুলি পুঁজিবাদীদের চেম্বার অফ কমার্সে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি এবং ব্যবসার মধ্যে এই সম্পর্ক শুধু জাতীয় সংসদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না বরং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারা স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিতেও প্রসারিত হয়েছিল। যা তাদের ব্যবসার একচেটিয়া সুযোগ সৃষ্টি করে।’

বৈষম্যহীন সামাজিক সুযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে অধ্যাপক সোবহান বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গভীরভাবে অন্যায় এবং অন্যায়কে চিরস্থায়ী করছে। ‘দক্ষিণ এশিয়ায় মানসম্মত শিক্ষার বাজেট খুবই কম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে পরিমাণগতভাবে শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বেড়েছে কিন্তু গুণগতমান, বিশেষ করে পাবলিক শিক্ষার মান নিম্ন পর্যায়েই রয়ে গেছে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফকরুল আলম। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শামস্‌ রহমান। সমাপনী বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।