সবজিতে আগুন, দাম বেড়েছে মাংস-ডিম-পেঁয়াজের

‘আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। মাছ-মাংস-ডিম এখন আশাও করি না। শেষ ভরসা সবজি, সেটাতেও আগুন। ডাল-আলু দিয়ে ভাত খেতেও এখন কষ্ট হয়ে যায়।’

বুধবার (৯ অক্টোবর) এ ভাবেই নিজের কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মো. রোকন হোসেন।

দীর্ঘদিন ধরেই নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজার অস্বস্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই। বিভিন্ন সময় নানান পণ্যের দাম কিছুটা ওঠা-নামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। মাছ, মাংস, ডিম কিংবা সবজি, কোনোটিরই দাম নাগালে নেই। এতে নাজেহাল সাধারণ ক্রেতারা।

এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুলসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে প্রায় প্রতিটি সবজির দাম। শুধুমাত্র আলু ও পেঁপে বাদে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না।

এসব বাজারে প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বরবটি ১৩০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মুলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, সিসিঙ্গা ১০০ টাকা ও পটোল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি শিম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৮০০ টাকা, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা। আর প্রতি পিস লাউ ৮০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপির জন্য ৮০-১০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

শাকের বাজারে প্রতি আঁটি লাউশাক ৪০ টাকা, পালংশাক ৪০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা ও কলমিশাক ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স্থিতিশীল রয়েছে কাঁচা মরিচের দাম ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে সবজির সরবরাহ কমেছে। সেই সঙ্গে মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় উৎপাদনও কমেছে। ফলে বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তবে, শীত মৌসুমের সবজি বাজারে আসা শুরু হলে সবজির দাম কমবে।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, পাইকারি সবজিই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দু-একটি সবজি ছাড়া কোনোটিই ৮০ টাকার নিচে নেই। বেশির ভাগ সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে। ফলে বেচাবিক্রি কমে গেছে।

এদিকে, বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।

তবে ইলিশের দাম স্থির আছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি হারে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকায়। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিতে ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে বেড়েছে মাছের দাম। বন্যার পানিতে শত শত একর মাছের ঘের পানির নিচে চলে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এ জন্য বেড়েছে মাছের দাম।

মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। আর সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এ ছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। বন্যায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে ফলে মুরগির দাম চড়া।

এদিকে খুচরা ও পাইকারি উভয় ক্ষেত্রে ঝাঁঝ বেড়েছে পেঁয়াজের। খুচরায় প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।

ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু তার যেন প্রতিফলন নেই বাজারে। এলাকাভেদে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন দামে হতাশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকার বদলেছে, তবে বাজার সিন্ডিকেট একই আছে। আর সিন্ডিকেটের কবলেই জিম্মি ভোক্তার পকেট। এ অবস্থা থেকে যেন আর পরিত্রাণ নেই!

টাস্কফোর্স গঠন নিয়ে ভোক্তরা বলছেন, বাজারে নেই টাস্কফোর্সের তদারকি কার্যক্রম। এতে বাজার অস্থির করে ভোক্তার পকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধু পদক্ষেপ নিলেই হবে না, বাজার নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে।