সরাসরি ভোটেই চেয়ারম্যান-মেয়র নির্বাচিত হওয়া উচিত : গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের দেয়া প্রস্তাবনার বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এমন কিছু রয়েছে যা বাস্তবতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। কিছু বিষয়ের কোনো যৌক্তিকতাও নেই। এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে স্থানীয় সরকারগুলো কোনোভাবেই শক্তিশালী হতে পারবে না।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ও ইউএনডিপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনসংখ্যার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য ও দেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলী।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের মিডিয়া প্রফেশনাল গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সমর রায়, শিল্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুব আলম ফিরোজ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ মহসিন কবীর, ডেমক্রেসিওয়াচের কর্মসূচি পরিচালক ফিরোজ নুরুন নবী যুগল, নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলী বলেন, সংস্কার কমিশন স্থানীয় সরকারের কাঠামোকে সংসদীয় ব্যবস্থার অনুরূপ করতে গিয়ে যেভাবে ‘বিধানিক’ ও ‘নির্বাহী’ দুটি ভাগ করা হয়েছে এবং সেখানে চেয়ারম্যান–মেয়রের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের আদলে নির্বাহী কাউন্সিল, স্পিকারের আদলে সভাধ্যক্ষ, বিরোধীদলীয় নেতার আদলে ছায়া পরিষদ বা কাউন্সিল নেতা নির্বাচনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবতা এবং বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে আরো আলাপ আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমরা এখনো জাতীয় সংসদকেই কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিনত করতে পারিনি, সেখানে প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে সভাধ্যক্ষের পরিচালনায় বিধানিক কার্যক্রম, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পরিষদকে কার্যকর করা সম্ভব হবে কিনা সে আশঙ্কা রয়ে যায়।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বা কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান- মেয়র নির্বাচনের যে বিধানের কথা বলা হয়েছে, এর ফলে ভোট কেনা- বেচার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমেই চেয়ারম্যান- মেয়র নির্বাচিত হওয়া উচিত।

আবার ইউপি সদস্য বা কাউন্সিলরদের মধ্যে কেউ সার্বক্ষণিক আবার কেউ সাধারণ সদস্য হিসেবে অবৈতিনক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ তারা নির্বাচনের আগে জানতে পারবেন না কে সার্বক্ষণিক আর কে অবৈতনিক হবেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সকল জনপ্রতিনিধি যেখানে তাদের বেতন–ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন, সেখানে কে অবৈতিক সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হবেন?

জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় যেখানে তিনটি করে ওয়ার্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে তাহলে পরিষদের খরচও বাড়বে। এতে ব্যয় সাশ্রয়ি হওয়ার সুযোগ থাকছে না। যদি সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে একই কাঠোমোর আওতায় আনা হয়, তাহলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আর দরকার কি?
কমিশনের সুপারিশে চেয়ারম্যান–মেয়রের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন। এসব বিষয় নিয়ে সংস্কার কমিশনকে আগে থেকেই অবহিত করেছিল এডভোকেসি ফোরাম। তারপরও কমিশন এসব প্রসঙ্গ আমলে না নিয়ে তারা সম্প্রতি সংস্কার প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। তবে সংস্কার প্রস্তাবে কিছু ভালো বিষয়ও যুক্ত হয়েছে বলে এডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে মত দেয়া হয়।