সস্তার বাজারে চোখ রাঙাচ্ছে গাজর

গাজর পুষ্টির এক শক্তিশালী উৎস। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শীতকালীন সবজি হলেও বছরজুড়ে মিলছে গাজর। সেই গাজরের দাম এখন সেঞ্চুরি পার করেছে।

ঈদের পর যেখানে সব ধরনের সবজি দর কমেছে। অনেক সবজি পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে দাপটের সঙ্গে দর বাড়ছে গাজরের। যেন সস্তার বাজারে দর হাকিয়ে একাই চোখ রাঙাচ্ছে গাজর।

আজ বুধবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের আগে যেখানে খুচরা সবজির দোকানে দেশি গাজর প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকা, এখন সেই গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। ঈদের আগে বিদেশি গাজর প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, এখন সেই গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৬০ টাকা। ঈদের পর থেকে গতকালও টমেটোর দর ছিল প্রতিকেজি ৬০ টাকা, এখন সেই টমেটো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। বাজার ও মানভেদে দরের ভিন্নতা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ বাজারে কিছুটা কমেছে সবজির দাম

ঈদের ছুটিতে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে, এতে বাজারে ক্রেতা সংকট জানিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে দেশি যেই গাজর প্রতিকেজি ৬০ টাকা দরে বেচা হতো, এখন বেচা হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা দরে। অবশ্য বিদেশি গাজরের দর এর চেয়েও বেশি। এখন বিদেশি গাজর দেড়শ টাকার বেশি দরে বেচা হচ্ছে। আজ বাড়তি দরে বেচা হচ্ছে টমেটোও।

ঈদের পর সবজির দর কমেছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন লাউ ও চালকুমড়া পানির দরে বেচা হচ্ছে। লাউ ও চাল কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। ঈদের পর শসার দাম কমেছে। পোটল, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, করলা, লতি, চিচিঙ্গা, ছড়া কচু, পেঁপে, লেবু ও কাঁচামরিচের দাম কমেছে। ফ্রেশ, সাইজ ও বাজার অনুসারে দরে ভিন্নতা রয়েছে।

কারওয়ান বাজারে কথা হয় ক্রেতা রাজিব চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে ৫০০ টাকার যে পরিমাণ সবজির বাজার করেছি, এখন সেই পরিমাণ বাজার করেছি ২৮০ টাকায়। পোটল, ঢেঁড়স, করলা, লতি, কাঁচামরিচ, লেবু, শসাসহ প্রায় সব সবজি দর কম দেখছি। তবে গাজরের দর অনেক বেশি দেখছি। ঈদের আগে গাজরের দর এতো ছিল না।’

কাপ্তান বাজারে কথা হয় ক্রেতা নজরুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবজির দর এখন কম। ৩৫০ টাকার সবজি কিনেছি। আগে এই পরিমাণ সবজি কিনতে প্রায় ৬০০ টাকা লাগতো।’

ঈদের পর থেকে বাজারে ক্রেতা নেই জানিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাদেক বলেন, ‘বাজারে বেচাবিক্রি নেই। দুই-একটি বাদে সব সবজির দর কমেছে। এখন গাজরের দর বাড়তি। আজ টমেটোর দরও বাড়তি। তবে লাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া দর খুবই কম। এতো কম যে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়ার এমন দর গত পাঁচ-ছয় বছরে দেখি নাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের আগে বাজারে সবজির দর যে অবস্থা ছিল, এখন তা উধাও। ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রায় সবজির দাম তুলনামূলক কম দরে বেচাবিক্রি হচ্ছে। এখন রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির দর প্রতিকেজি ৫০ টাকা নিচে রয়েছে।

সবজি বেশিদিন রাখা যায় না, পঁচার ভয় রয়েছে জানিয়ে কাপ্তান বাজারের সবজি বিক্রেতা আকবর হোসেন বলেন, বাজারে ক্রেতা নেই। এই কারণে সবজির দর কম। সামান্য লাভ বা চালান ওঠলেই বেচা হচ্ছে সবজি।

তিনি বলেন, ঈদের পর বাজারে এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। লোকজন ঢাকায় ফিরলে সবজির দর ফের বাড়বে।

সবজির সরবরাহ কম জানিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা ফাহিম বলেন, এখন বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে, এখন সবজির চাহিদা কম। ঘরে ঘরে মাংস খাচ্ছে সবাই। তাই সবজির ওপরে চাপ নেই। এতে বাজারে সবজির দরে মন্দা।

বাজার ঘুরে জানা যায়, ঈদের আগে শসা, কাঁচামরিচ, গাজর, টমেটো ও লেবুর দাম বেড়েছিল। সালাদ তৈরির উপকরণ হওয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা ছিল বেশি। ঈদের দিন থেকেই দুটি বাদে সেই সবজির দাম কমতে শুরু করে। এখন লেবুর হালি ২০ থেকে ২৫ টাকা ও কাঁচকলা ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বেচা হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বেচা হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি পোটল ৪০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গোলবেগুন ৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ছড়া কচু ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকায় বেচা হচ্ছে।

দেশি পেঁয়াজ বেচা হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা এবং আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি রসুন ১৬০ তেকে ১৭০ টাকা এবং আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু প্রতিকেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশি মুরগি প্রতিকেজিতে ৬৫০ টাকা এবং সোনালি মুরগির ২৫০ টাকা এবং ফার্মের মুরগির ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১২০ টাকা (লাল) এবং ১১০ টাকা (সাদা)। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২৩০ টাকা। হাঁসের ডিমের ডজন ২০০ টাকা।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ