সামাজিক সুরক্ষা বাজেটকে ঢেলে সাজানো একান্ত জরুরি

#উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রাক-বাজেট সংলাপে বিশষজ্ঞদের অভিমত

সাম্প্রতিক দশকে বাংলাদেশ ব্যাপকভিত্তিক আর্থসামাজিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। পাশাপাশি বর্তমানে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের কারণে জাতীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ইতিবাচক রূপান্তরের বাস্তবতাও তৈরি হয়েছে। নানামুখী আর্থ-সামাজিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে ঝুঁকিতে থাকা এবং বিপন্ন নাগরিকদের জীবনমান রক্ষা ও উন্নয়ননের জন্য তাই সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোকে ঢেলে সাজানো জরুরি। এই ঢেলে সাজানোর কাজটি আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট থেকেই শুরু করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘সামাজিক সুরক্ষায় জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংলাপে তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। ঢাকায় উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংলাপে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন একাডেমির যুগ্ম পরিচালক ড. মো. আব্দুল মজিদ প্রামাণিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান, সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. ইশরাত শামীম, এবং বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির।

উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষ থেকে প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় সংস্থার গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন যে, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ট্র্যাক রেকর্ড থাকলেও, এই কার্যক্রমগুলো প্রধানত গ্রামাঞ্চলের কৃষি-নির্ভর পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে প্রণিত ও বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। অর্থনীতিতে যে কাঠামোগত রূপান্তর ঘটে চলেছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে নগরাঞ্চলের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে বিশেষ নীতি-মনোযোগ দরকার বলে মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, দেশে কেবল গার্মেন্ট শিল্পেই ৪০ লক্ষ শ্রমিক থাকলেও সরাসরি সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ২০ হাজার শ্রমিক।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সুরক্ষা কৌশল প্রণয়নের ওপর জোর দেন ড. মজিদ প্রামাণিক। বিশেষত দেশের চরাঞ্চলে যে প্রায় এক কোটি নাগরিক রয়েছেন. তাদের সুরক্ষায় জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি খুবই জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ইতোমধ্যে সরকারি ও অ-সরকারি উদ্যোগে চরবাসীর জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে যে পাইলট কর্মসূচিগুলো সাফল্য দেখিয়েছে সেগুলোর কলেবর বাড়িয়েই চরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। ড. ইশরাত শামীম মনে করেন নগরাঞ্চলে বসবাসকারি নারী ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের দিকে বিশেষ নীতি-মনোযোগে দিতে হবে এবং এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা বাবদ বরাদ্দে। বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন যে, সামাজিক সুরক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ উপকরাভোগিদের কতোটা কাজে লাগছে সেদিকেও নজর দেয়া জরুরি। সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর উপকারভোগি নির্বাচনের ভুলত্রুটি দূর করা গেলে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক সামাজিক সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। তবে এ জন্য একেকটি অর্থবছরের বাজেটকে লক্ষ্য করে কাজ করার চেয়ে মধ্যম থেকে দীর্ঘমেয়াদি নীতি-কৌশলের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়াই বেশি কার্যকর হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।

সংলাপে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী, তরুণ গবেষক এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগি ড. মাহবুব হাসান।