সিলেটে লোকসানের মুখে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

গত কয়েক বছরে সিলেটে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যোগ হয়েছে নানা বৈচিত্রতা। বিশেষ করে নগরের জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, জেলরোড, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গেইট এলাকায় অসংখ্য রেস্টুরেন্ট চালু হয়। প্রতিটি রেস্টুরেন্টে সব সময় ভিড় লেগে থাকত। তবে সিলেটের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভয়ঙ্কর সঙ্ঘাত, সংঘর্ষে রূপ ধারণ করে পুরো দেশ। পুলিশের সাথে ছাত্রদের টানা সংঘর্ষে আহত ও নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। এতে সারা দেশের মতো প্রভাব পড়ে প্রকৃতিকন্যাখ্যাত সিলেটের পর্যটন ব্যবসায়।
যার কারণে শতাধিক পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ফাঁকা। মূল্যছাড়েও সাড়া নেই পর্যটকদের। প্রতিদিনই বুকিং বাতিল হচ্ছে। বিদেশী পর্যটক প্রায় শূন্য, ব্যবসায় চরম মন্দা। বেকার হাজারো কর্মী। দৈনিক কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। আয় কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবি ব্যবসায়ীদের।
পর্যটকনির্ভর সিলেটে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার চর্চা সাত বছর ধরে চলে আসছে। ফাস্টফুড, চাইনিজ, থাইসহ নানা মুখরোচক খাবারের গ্রাহক মূলত তরুণ-তরুণীরা। আবার বিশাল জায়গা নিয়ে দেশীয় খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।।
এসব রেস্টুরেন্টগুলো মূলত দুটি টাইপের। এক ধরনের রেস্টুরেন্ট ফাস্টফুড, চাইনিজ, থাইসইসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের। আধুনিক সাজসজ্জার এ সব রেস্টুরেন্টের গ্রাহক মূলত তরুণ-তরুণীরা। আর অন্য ধরনের রেস্টুরেন্ট দেশীয় খাবারের। বিশাল জায়গা নিয়ে উন্মুক্ত পরিসরে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে এসব রেস্টুরেন্টে।
‘পাঁচ ভাই’ নামক একটি রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে এমন ব্যবসার ট্রেন্ড শুরু হয়। সিলেটের রেস্টুরেন্টগুলোর প্রধান ক্রেতাই মূলত পর্যটক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা। ইমাম মোহাম্মদ জহির কঠোর পরিশ্রমের চেষ্টায় সিলেটের নয়াসড়কে বানিয়েছেন কাবাব কারিগর রেস্টুরেন্ট। জানিয়েছেন নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ছয় বছরে দাড় করানো ব্যবসায় লোকসানের পরিমাণই বেশি। ইমাম মোহাম্মদ জহির বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমাদের ব্যবসা হুটহাট পড়ে গেছে। মানুষের ভেতরে এখনও ভয়, আতঙ্ক বিরাজমান রয়েছে।’
শুধু কাবাব কারিগর নয়, ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে সিলেটের প্রায় তিনশ’র বেশি রেস্টুরেন্ট। যেখানে ব্যবসা ছিল জমজমাট, আনাগোনা ছিল স্থানীয় থেকে শুরু করে পর্যটকদের।
একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘সিলেট শহর হচ্ছে পর্যটনের শহর। পর্যটন ছাড়া এখানে কোনো ব্যবসা নেই। লোকাল মানুষরা তেমন খায় না। আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আশা করি আগামীতে সবকিছু শান্তিপূর্ণ হবে।’
বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কর্মরত কর্মচারীরাও পার করছেন বেকার সময়। পরিবারের আয় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন হওয়ায় মরিয়া হয়ে কাজ খুঁজছেন অনেকে। সিলেটে ৫ আগস্ট রাতে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেটের পানসি রেস্টুরেন্টের জেনারেল ম্যানেজার অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ‘আমাদের সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা। ভেতরে কিছু নেই। সব লুট করে নিয়ে গেছে।’
সিলেটে বন্যা ও চলমান পরিস্থিতির ধাক্কা কাটিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আবারও সচল করতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট ক্যাটারার্স গ্রুপের উপদেষ্টা খন্দকার সিপার আহমেদ বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অবশ্যই বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন তাদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ থাকবে সিলেটের আমাদের বাঁচাতে প্রণোদন দিতে হবে।’
শহরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও লম্বা বিরতির মুখে বড় লোকসান গুণছে নগরীর বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট। শিগগিরই পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার প্রত্যাশা পর্যটন নগরীর ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের।