এসএমই ফাউন্ডেশন, এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ভিসা’র উদ্যোগে আয়োজিত বিজনেস পিচ কম্পিটিউশনে সেরা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা উপস্থাপনকারী ৩জন নারী-উদ্যোক্তা পুরস্কৃত করা হয়েছে। বিজয়ীদেরকে ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার ডলার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
‘বিজনেস পিচ কম্পিটিউশন’-এ অংশগ্রহণের জন্য আবেদনের আহবান জানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রেক্ষিতে ৯২টি আবেদন পাওয়া যায়। প্রাপ্ত আবেদন যাচাই-বাছাই করে ‘বিজনেস পিচ কম্পিটিউশন’-এ অংশগ্রহণের জন্য ২৪ জনকে ‘বিজনেস পিচ কম্পিটিউশন’-এর কলা-কৌশল বিষয়ে দুই দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে এসএমই ফাউন্ডেশন, এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ভিসা’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচকমণ্ডলীর মূল্যায়ন, সরেজমিন পর্যবেক্ষণ এবং অংশগ্রহণের ক্রাইটেরিয়া বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ১০জন নারী-উদ্যোক্তাকে নির্বাচন করা হয়। ২৫ জুন ২০২৫ বুধবার আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত অডিটোরিয়ামে ‘বিজনেস পিচ কম্পিটিউশন’ -এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ১০জন উদ্যোক্তা জুরি বোর্ডের সামনে স্বীয় ব্যবসায়িক উদ্যোগ উপস্থাপন করেন। জুরি বোর্ড নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী প্রতিযোগীদের উপস্থাপনা ও সার্বিক বিষয়াদি মূল্যায়নপূর্বক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী নির্বাচন করেন।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় চূড়ান্ত পর্ব।
আরও পড়ুনঃ মিরপুরের বেনারসি ক্লাস্টারের আধুনিকায়ন ও পণ্যের বহুমুখীকরণে সহায়তা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন
প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ‘ইউনিক হোম-এর শারমিন সুলতানাকে ৫ হাজার ডলার, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ‘আইন সেবা’র রহিমা হককে ৪ হাজার ডলার এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী রোড ‘বুক বিডি’র তাকিয়া সুলতানা নোভাকে ৩ ডলার ডলার পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া বিজয়ী তিনজন উদ্যোক্তা এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন নওশাদ মুস্তাফা, পরিচালক, এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক; জনাব কানিজ আলমাস খান, সিইও, পারসোনা; জনাব ফারজানা চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গ্রীণ ডেল্টা ইন্সুরেন্স; ড. মেলিতা মেহজাবিন, অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এবং হুসনা ফেরদৌস সুমি, সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট, বিশ্ব ব্যাংক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা খান, ভিসা (বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের মঙ্গোলিয়া’র ভিজিটিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সারা টেইলর।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদশেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশের পরিণত করার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন এসএমই খাতের উন্নয়নে পলিসি অ্যাডভোকেসি, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, ক্রেডিট হোলসেলিং, পণ্য বাজারজাতকরণ, পণ্য বিপণনে পরামর্শ ও সহায়তা, ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ, বিজনেস সাপোর্ট সার্ভিস, নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন, ‘বিজনেস পিচ কম্পিটিউশন’-এর মতো আয়োজন নিজেদের ব্যবসা এগিয়ে নিতে এবং ব্যবসার তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার মাঝে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে এসএমই ফাউন্ডেশন এমন আরো উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ভিসা (বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, নারী-উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের অংশীদার প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় নারী-উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে সহায়তা করার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। স্থানীয় নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রগতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের টেকসই এসএমই খাতের ভিত্তি শক্তিশালীকরণে এই ধরনের সম্মিলিত উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের মঙ্গোলিয়া’র ভিজিটিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সারা টেইলর বলেন, আজ আমরা বাংলাদেশের নারী-উদ্যোক্তাদের দূরদৃষ্টি, স্থিতিশীল ও উদ্ভাবনী দক্ষতা শক্তি উদযাপন করছি। নারী-উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তাদের ভবিষ্যতকে আরো উজ্জ্বল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করছে। সমস্যাকে সম্ভাবনায় পরিণত করার এই যাত্রায় জয়ী করতে তাদের পাশে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। যদি আজ আপনারা জয়ী নাও হন, আমাদের অনুরোধ, আপনারা এগিয়ে যান, আবার চেষ্টা করুন, আপনারাই এই দেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি অন্যতম চালিকাশক্তি।
উল্লেখ্য, র্বতমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২% শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশের ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯%-এর বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫% এসএমই খাতে। এই খাতে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত আছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ফাউন্ডেশন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক নারী-উদ্যোক্তাকে সেবা প্রদান করেছে। নতুন নারী-উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং বিদ্যমান নারী-উদ্যোক্তাদের সার্বিক ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় যুক্তকরণের লক্ষ্যে এবং দেশে নারী-উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা চুক্তির আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তম্মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক, ইউএনডিপি, এডিবি, আইএলও, আইটিসি, দি এশিয়া ফাউন্ডেশন, ভিসা, টিএফও কানাডা উল্লেখযোগ্য।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, যাদের ৬০%-ই নারী-উদ্যোক্তা।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।