নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন-এর ১৭তম প্রয়াণবার্ষিকী আগামী ১৪ই জানুয়ারি। এ উপলক্ষ্যে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল ১৪ ও ১৭-১৮ই জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন করেছে তিনদিনব্যাপী ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব ২০২৫’। উৎসবে বাঙলা নাট্যরীতিতে নির্মিত স্বপ্নদলের দেশ-বিদেশে প্রশংসিত প্রযোজনা ‘চিত্রাঙ্গদা’-র দু’টি এবং নাট্য্যচার্য সেলিম আল দীনকে উৎসর্গ করে নির্মিত বাঙলা মূকাভিনয়রীতির দর্শকনন্দিত মূকনাট্য ‘ম্যাকবেথ’-এর দু’টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও থাকছে স্মরণ-শোভাযাত্রা, সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, নাট্যাচার্যের প্রতিকৃতি সহকারে শিল্পকলাচত্বর সজ্জা, নাট্যাচার্যের জীবন-কর্ম-দর্শন নিয়ে আলোচনা প্রভৃতি। ঐতিহ্যের ধারায় গবেষণাগারপদ্ধতিেেত নির্মিত ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘ম্যাকবেথ’ দু’টি প্রযোজনারই নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যাচার্যের ছাত্র জাহিদ রিপন।
নাট্যাচার্যকে নিয়ে স্বপ্নদলের নিয়মিত উৎসবের ৩১তম এ আসরের স্লোাগানÑ ‘বাঙলা নাট্যো কথা অমৃতসমান, সেলিম আল দীন কহে শুনে পুণ্যবান’।
উৎসবে প্রথম দিন ১৪ই জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল দশটায় থাকছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন কলাভবন থেকে নাট্যাচার্যের সমাধি অভিমুখে স্মরণ-শোভাযাত্রা ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ।
দ্বিতীয় দিন ১৭ই জানুয়ারি শুক্রবার বিকাল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে আধুনিক বাঙলা নাট্যরীতির প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’-র ১১২ ও ১১৩তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব উদ্বোধন করবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ চৌধুরী ।
সমাপনী দিন ১৮ই জানুয়ারি শনিবার বিকাল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের রচনা অবলম্বনে জুয়েনা শবনমের কাহিনি-পুনর্বিন্যসে ব্যতিক্রমী মূকনাট্য (মাইমোড্রামা) ‘ম্যাকবেথ’-এর ১৫ ও ১৬তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করবেন নাট্যাচার্যের শিল্পসঙ্গী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রশীদ হারুন।
নির্দেশক জাহিদ রিপন বলেন,‘নাট্যগুরু সেলিম আল দীনের পরামর্শেই তাঁর প্রয়াণের পরে কাব্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনা নির্মাণ করেছি। আর নাট্যাচার্য সমগ্র জীবন ব্যয় করেছেন বাঙলা নাট্যরীতি পুননির্মাণ-গবেষণায়, তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই তাঁকে উৎসর্গ করে গবেষণাগারধারায় নির্মাণ করা হয়েছে বাঙলা মূকাভিনয়রীতির প্রযোজনা ‘ম্যাকবেথ’। এ স্মরেেণাৎসবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘ম্যকবেথ’ মঞ্চায়ন তাই নিঃসন্দেহে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
প্রসঙ্গত, মহাভারত অবলম্বনে রচিত ‘চিত্রাঙ্গদা’-র নাট্যকাহিনিতে মণিপুর-রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা মহাবীর অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। এবারে অর্জুনকে লাভ করেও চিত্রাঙ্গদার অন্তর দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকেÑ অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? এভাবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পৌরাণিক কাহিনির আড়ালে যেন এ কালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মানাবস্থানের প্রেরণারূপে উপস্থাপিত হয়। অন্যদিকে, স্বার্থপরতা-ক্ষমতালিপ্সা-অতি উচ্চাকাক্সক্ষায় সাহসী সেনাপতি ম্যাকবেথের রাজা ডানকানকে হত্যাসহ ক্ষমতা দখল, শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য একর পর এক হত্যাকাণ্ড এবং পরিশেষে তারও একই পরিণতির শিকার হওয়ার বিশ্ববিখ্যাত ট্র্যাজেডি ‘ম্যাকবেথ’।