হাজার কোটি টাকার লেনদেন, বাজার মূলধনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা যোগ

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

টানা ঊর্ধ্বমুখিতার সঙ্গে দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে লেনদেনের গতি বাড়ছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (২৩ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এতে প্রায় ১০ মাসের মধ্যে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে।

লেনদেনের গতি বাড়ার পাশাপাশি ভালো, মাঝারি, খারাপ সবখাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে গেছে। এতে গত বছরের ৮ আগস্টের পর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনে সব থেকে বেশি বাড়লো। সেইসঙ্গে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লো।

আরও পড়ুনঃ মূল্যসূচকের উত্থানে লেনদেন ৮৬০ কোটি

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষদিকে দাম বাড়ার তালিকা থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। তবে বাছাই করা ভালো কোম্পানিগুলো দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে। এতে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১০২টির। আর ৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে বাছাই করা ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৩টির শেয়ার দাম কমেছে।

এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৪৩টির দাম কমেছে এবং ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩৭টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৩৩টির দাম কমেছে এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৯টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় ডিএসইর বাজার মূলধন একদিনে ৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে ৭ লাখ ৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকায় উঠে এসেছে। আগেরদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।

মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনে বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৮৬ কোটি ৫৩ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭২২ কোটি ২৯ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বরের পর ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হলো।

এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইস্টার্ন ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেক্সিমকো ফার্মা, উত্তরা ব্যাংক, গ্রামীণফোন এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৫০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৮টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ