হামাস ৬ বন্দিকে ছেড়ে দিলেও ৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিল না ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আটক থাকা ৬ ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে উপত্যকাটির শাসনকারী গোষ্ঠী হামাস। বিনিময়ে ৬২০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের দাবি, হামাস পরবর্তী বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত হবে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা।

এদিকে হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনিদের সপ্তম ব্যাচকে মুক্তি দিতে ইসরায়েলের এই বিলম্ব “যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন”। এছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে মুক্তির জন্য হামাস ৬ জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্ত করার পর ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবে অবশিষ্ট সকল বন্দিদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ করেছে।

বিবিসি বলছে, ইসরায়েল ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিলম্বিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এটিকে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় আরেকটি বড় ধরনের সম্ভাব্য সংকট বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও শনিবারই ছয় ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি দিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস পরবর্তী বন্দি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বিত হবে। তিনি বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে বন্দিদের মুক্তির সময় যে “অসম্মানজনক অনুষ্ঠান” করে হামাস, সেটি ছাড়াই বন্দি মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে।

চলমান যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে আর এক দফা বন্দি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এই দফায় চার জনকে ফেরত দেওয়ার কথা যারা বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন। জীবিত বাকি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা।

অবশ্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি সঠিক পথে রাখতে এবং সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে কাজ করবেন মধ্যস্থতাকারীরা।

নেতানিয়াহু অবশ্য হামাসের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার চালানোর জন্য বন্দিদের অসম্মানজনক ব্যবহারসহ’ চুক্তির ‘বারবার লঙ্ঘনের’ অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে হামাসও বন্দি মুক্তিতে বিলম্বের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। তবে নেতানিয়াহুর বিবৃতির তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি হামাস।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা তাদের মধ্যে ৫০ জন যাবজ্জীবন এবং ৬০ জন দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। এছাড়া আরও ৪৪৫ জনকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আটক করেছিল।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলার সময় হামাস যাদের আটক করেছিল তাদের মধ্যে ৬২ জন এখনও বন্দি অবস্থায় আছে। এর মধ্যে অর্ধেক জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়। তিন পর্বের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা, যা আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।