১১ টাকার ডিম খুচরায় ১৬ টাকা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অস্থির ডিমের বাজার। প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০-৬৪ টাকা। আর প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ -১৯২ টাকা পড়েছে। যা সাধারণ মানুষের ক্ষয় ক্ষমতার বাইরে।

খামারি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি ডিমে দাম বেড়ে যায় সাড়ে ৪-৫ টাকা ৫০ পয়সা। অতিরিক্ত মুনাফা নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তবে খামারিদের দাবি সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় অনেক খামার পানিতে ডুবে গেছে। এতে আগের চেয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে। এছাড়া লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারি প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ১১-১১ টাকা ৫০ পয়সা। তা খুচরা দোকানগুলোতে ১৫-১৬ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব এসে পড়েছে মধ্যবিত্তের ঘাড়ে। এছাড়া নিম্নআয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা ডিমের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তাদের মতে, গরীবের সুষম খাদ্যের মধ্যে প্রথম ছিল ডিম। সেটাও যদি সিন্ডিকেটের থাবায় পড়ে, তাহলে যাবো কোথায়? ডজনপ্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকায় ডিম ছিল।

ব্যবসায়ীরা শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ডিমের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে বেচাকেনাতেও ভাটা পড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতা সংকটে ডিমগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারইয়ারহাট পৌর বাজারের এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, বড় বড় আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে বাড়তি দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টিতে এখনই নজর না দেয় তা হলে খুচরায় প্রতি পিস ডিমের দাম ১৭ টাকায় ঠেকতে বেশিদিন সময় লাগবে না।

মিরসরাই পৌরসদরে বাজার করতে আসা স্কুল শিক্ষক নুরুল হরি বলেন, ডিমও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কোনো পণ্যই নিয়ন্ত্রণে নেই। যার যেভাবে খুশি দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বড়তাকিয়া বাজারে আসা মুসলিম উদ্দিন বলেন, সব সময় পরিবারের জন্য এক ডজন করে ডিম কিনতাম। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় এক ডজনের টাকা দিয়ে সাতটি ডিম কিনতে হচ্ছে।

উপজেলার করেরহাট একরাম পোলট্রির সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, আমার খামারে ৫ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪০০ পিস ডিম উৎপাদন হয়। এবারের বন্যায় আমার প্রায় ৭০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন কিছুটা ভালো দাম পাচ্ছি। এখন পাইকারি ১০০ পিস ডিম ১১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেন অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করছে বুঝতেছি না।

মিরসরাই উপজেলার ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাই আমাদের এখানে বেচাকেনাও কমে গেছে। কিন্তু আমাদেরও তো বাড়তি দরে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দরে বিক্রি না করে উপায় নেই।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, বাজারে মাছ-সবজির সরবরাহ কম, দামও চড়া। তার ওপর বন্যার প্রভাব তো রয়েছে। আমাদের ডিমের উৎপাদন আরও বাড়ানো দরকার।