১৫ বছরে টিসিবিকে বেশি ধ্বংস করা হয়েছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

# তিন ক্যাটাগরিতে ১০ জন সাংবাদিক পেয়েছেন ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

গত ১৫ বছরে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি বলেন, গত সরকার প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। পাচারের জন্য নিয়ামক হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করা হয়েছে টিসিবিকে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, সামনে আর যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে কাজ চলছে।

রজমানে খাদ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থেকেও নিম্নগামী থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেজুর, ছোলা, ডালসহ এ সময় প্রয়োজনীয় সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করছি। সে প্রস্তুতি আমাদের আছে। হঠাৎ করে তেলের দাম এত বাড়ানোর কারণ ব্যখ্যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে এটি করতে হয়েছে। তা না হলে সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হতো। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে যেত।


মঙ্গলবার ইআরএফ মিলনায়তনে ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান তিন ক্যাটাগরিতে ১০ জন সাংবাদিক পেয়েছেন ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এছাড়া গেস্ট অব অনার- এর বক্তৃতায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষির বীজ, সারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করার জন্য কোনো একটা জায়গা বা বিভাগকে বাদ রাখা হয়নি। প্রতিটি জায়গায় গুটিকয়েক মানুষের অবস্থান তৈরি করা হয়েছিল। উপদেষ্টা বলেন, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের শিক্ষা, কৃষি, বিচারালয়, রাজস্ব বোর্ড থেকে শুরু করে যত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি করতে পারলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম-যারা দায়িত্বে আসবে তাদের জন্য এটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা কি সব সময় জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভরশীল থাকব? না, আমাদের নিজেদের কর্মক্ষমতা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে জোয়ার আসুক ভাটা আসুক যাতে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে পারি। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তখন যেন আমরা সুযোগ নিতে পারি।’

টিসিবির কার্যক্রম প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, টিসিবি যে ১ কোটি পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষার জন্য খাদ্য পণ্য বিতরণ করে থাকেÑএটা তাত্ত্বিকভাবে খুবই সুন্দর একটা প্রকল্প। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো টিসিবি।

উপদেষ্টা জানান, টিসিবির বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার একটা বাজেট আছে। যার মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, আপনারা শুনে অবাক হবেন, দেশে টিসিবির ষোলোটি অফিস রয়েছে। এ ষোলোটা অফিসে কর্মকর্তা, কর্মচারী, ড্রাইভার, দরোয়ান সব মিলিয়ে লোক মাত্র ১৪২ জন, যার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। এটি হাস্যকর!

তিনি বলেন, ‘এই যে ১ কোটি কার্ড (টিসিবির) দেওয়া হয়েছে এবং এর যে ডিলার রয়েছে, এখানে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। এই অনিয়মগুলোকে চিহ্নিত করতে চাই। ইতিমধ্যে আমরা ৫৭ লাখ কার্ড নির্দিষ্ট করেছি এবং ১ কোটি থেকে বাকি কার্ডগুলো আমরা বাদ দিয়েছি। একই সঙ্গে স্মার্টকার্ড নিয়ে এসেছি। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারলে দাম বেঁধে দেয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশন এটি নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার- এর বক্তৃতায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমাদের জায়গা কম, তাই এখন লক্ষ্য হচ্ছে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য উৎপাদন। যেমন: রাশিয়া, ইউক্রেন শস্য উৎপাদন করবে, কারণ তাদের জায়গা আছে। আমাদের জায়গা কম, তাই থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো ভ্যালু অ্যাডেড শস্য উৎপাদন করতে হবে। একই সঙ্গে ডিম, মুরগি ও মাছের মতো পণ্যগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি যাতে এগুলো সহজলভ্য করা যায়; সেজন্য এগুলোর খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাজার এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। কিন্তু সেটার রিফ্লেকশন রিপোর্টে আমরা দেখি না। এক ধরনের জেনারালাইজ করে সব কথা বলা হয়।

প্রসঙ্গত, তিনটি ক্যাটাগরিতে ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে পাঁচজন, অনলাইনে দুইজন এবং টেলিভিশন ক্যাটাগরি থেকে তিনজন পুরস্কার পেয়েছেন।
‘প্রিন্ট’ ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম হয়েছেন- আমাদের সময় এর সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াদুল ইসলাম ও সময়ের আলো পত্রিকার বিজনেস এডিটর আলমগীর হোসেন। এ ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের দুই বিশেষ প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন হারুন ও এফএইচএম হুমায়ূন কবির। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

‘অনলাইন’ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন জাগোনিউজ২৪.কম এর চিফ রিপোর্টার ইব্রাহীম হুসাইন অভি এবং দ্বিতীয় হয়েছেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মিজানুর রহমান চৌধুরী। এছাড়া, ‘টেলিভিশন’ ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদ হোসেন পাপন এবং দ্বিতীয় হয়েছেন যৌথভাবে একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিনিয়র রিপোর্টার হরিপদ সাহা।