বাবা-মা হারা এক অসহায় ও দরিদ্র নারী। এক ভাই আছে ঠিকই, কিন্তু রোজগার কিছু করেন না। বিয়ে করে জীবনটাকে সাজাতে চান নতুন করে। কিন্তু, সেখানেও বাধা আর্থিক টানাপোড়েন। এভাবেই নিজের জীবনের করুণ গল্প শুনিয়ে মন গলাতেন যুবকদের। তার গল্প শুনে মন গলেও যেত কারও না কারও। কিন্তু বিয়ের পরই শুরু হতো আসল খেলা। ভালো বধূ সেজে শ্বশুরবাড়ি থেকে গয়না-টাকা-পয়সা লুট করে দিতেন চম্পট। ঠিক যেন কোনও সিনেমার গল্প!
গল্পটা অনুরাধা পাসওয়ান নামে ভারতের রাজস্থানের এক তরুণীর। বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু এভাবে ২৫টি বিয়ে করেছেন তিনি। তার সুনিপুণ প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন একে একে ২৫টি যুবক। অবশেষে গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হয়েছেন এ তরুণী।
মঙ্গলবার (২১ মে) দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশ জানিয়েছে, অনুরাধা একা নন, তার সঙ্গে পুরো একটা চক্র জড়িত আছে। অনুরাধা সেই চক্রেরই হোতা। এখনও পর্যন্ত তিনি ২৫ জনকে এই ভাবেই লুট করেছেন। তবে একই শহর বা জায়গায় প্রতারণার ছক কষতেন না অনুরাধা ও তার গ্যাং। নতুন শহর, নতুন নাম-পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন অনুরাধা। তারপর গরিব কনের অভিনয় চালিয়ে যেতেন। এভাবে ওই এলাকারই কোনো না কোনও যুবককে ফাঁসাতেন প্রতারণার জালে।
অনুরাধার দলের সদস্যরাই তার ছবি নিয়ে যেতেন বিভিন্ন পাত্র এবং পরিবারের কাছে। অনুরাধার জীবন সংগ্রামের ভুয়া গল্প শুনিয়ে বিশ্বাস অর্জন করতেন মানুষের। ঠিক হতো বিয়ে। ওই দলের সদস্যরাই বিয়ের সব আয়োজনের জন্য টাকা নিতেন। তারপর মন্দিরে বা বাড়িতেই বসতো বিয়ের আসর। বিয়ের পর নববধূ অনুরাধা থাকতেন শ্বশুরবাড়িতে। নিজের মিষ্টি স্বভাবে ভুলিয়ে রাখতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের। সকলের মন জয়ের পরই শুরু হতো প্রতারণা। খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে নেশার দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে দিতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের। তারপরই নগদ টাকা-পয়সা ও গয়না লুট করে পালাতেন অনুরাধা।
সবশেষ গত ২০ এপ্রিল সোয়াই মাধোপুরের বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয় অনুরাধার। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে ধুমধাম করে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অনুরাধা এবং বিষ্ণু। কিন্তু, বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই গয়না, নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেন অনুরাধা।
পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিষ্ণু। সেই সূত্র ধরেই অনুরাধার নাগাল পায় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এখন অনুরাধার চক্রের অন্য সদস্যদের খোঁজ চলছে।