৩ মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা

চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ব্যাংক খাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। তাতে গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায়।

এর আগে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংকে সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছিল। তাতে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।

সেই হিসাবে ৩ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে সুদসহ আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বা ২ শতাংশের বেশি।

আরও পড়ুনঃ ৬ মাসে ব্যাংকের আমানত বেড়েছে সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা


দেশের ব্যাংক খাতের ঋণ–আমানত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ এক পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে আমানতের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তাতে বেশি প্রবৃদ্ধি ছিল গ্রামীণ এলাকার আমানতের। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামীণ এলাকায় আমানতের ৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সময়ে শহরাঞ্চলের আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে ব্যাংকে গ্রামের চেয়ে শহরের আমানতই বেশি।

মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার আমানতের মধ্যে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। আর গ্রামাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে যত আমানত ছিল, তার ৮৪ শতাংশের বেশি শহরাঞ্চলের। বাকি প্রায় ১৬ শতাংশ আমানত গ্রামীণ এলাকার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আমানত বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানতের সুদ হারও বেড়েছে।

গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। মার্চ প্রান্তিক শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সোয়া ৬ শতাংশে। সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক খাতে ৩ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আমানত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে ৩ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আমানত বাড়লেও এ সময়ের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকায়। গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে যার পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৩ মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মার্চ শেষে বিতরণ করা ব্যাংকঋণের মধ্যে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা বা ৯২ শতাংশই বিতরণ করা হয়েছে শহরাঞ্চলে। গ্রামীণ অঞ্চলে গেছে মোট ঋণের মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। এগুলোকে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট (এনএফএ) বলা হয়। এই নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স বা সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংক হিসাবে আমানত দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময় যার পরিমাণ ছিল চার হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমা বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪.৬৯ শতাংশ।

সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কৃষকরা ছাড়াও এসব হিসাবের আওতায় থাকেন পোশাক শ্রমিক, অতিদরিদ্র মানুষ, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীসহ অনেকে। এর মধ্যে কৃষকদের হিসাব ও আমানত সবচেয়ে বেশি।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ