বসুন্ধরা-ওরিয়নসহ সাত কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

বিভিন্ন সময়ে আলোচিত দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এস আলম, নাসা, সামিট, ওরিয়ন ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের (নগদ লিমিটেড) মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক দিনের মাথায় রোববার ওই চিঠি পাঠান আহসান হাবিব। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বুধবার।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের আয়কর আইনের ২২৩ ধারার আওতায় এনবিআর কর ফাঁকি রোধে সম্পত্তির অন্তবর্তীকালীন অবরুদ্ধকরণ বা ক্রোকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।

চলমান তদন্ত অনুযায়ী, এই কোম্পানিসমূহের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগসহ আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

এ কারণ দেখিয়ে ‘জনস্বার্থে’ এসব কোম্পানির শেয়ার স্থানান্তর (কেনা-বেচা ও দান) স্থগিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি আর্থিক খাত এবং বড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তৎপর হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন। তখনই বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও নাসার মালিকদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে সিআইসি।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তখন চিঠিও পাঠায় আর্থিক খাতের এ গোয়েন্দা সংস্থা।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ক্ষমতার পালাবদলের পরপরই গ্রেফতার করা হয়েছিল। নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও মঙ্গলবার রাতে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এনবিআরের তরফ থেকে প্রথম অনুসন্ধান শুরু হয় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে। এনবিআরের আয়কর বিভাগের কর অঞ্চল-১৫ এর কমিশনার তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি পাঠায় সব ব্যাংকে। সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয় কর অঞ্চল থেকে।

সে সময় ওই কর অঞ্চলের কমিশনার ছিলেন সিআইসির বর্তমান মহাপরিচালক আহসান হাবিব।

এদিকে মোবাইলে আর্থিক সেবার কোম্পানি নগদ নিয়ে এনবিআরের কোনো দপ্তর থেকে এর আগে কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে তৎপর হয়েছে।

নানান অনিয়ম ও অভিযোগের ভিত্তিতে ২১ অগাস্ট নগদের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক বদিউজ্জামান দিদারকে। তাকে সহায়তা করতে ছয় কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর বর্তমান ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা করতে ‘ম্যানেজমেন্ট বোর্ড’ নামের একটি পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাঁচ সদস্যের এ পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয় বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করে দেওয়া প্রশাসক এবং তার সহায়ক দলকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে এ পর্ষদ গঠন করে দেওয়ার কথা বলা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে।