বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ ও নারী সাফ টুর্নামেন্ট একই সময় চলছিল। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ট্রফি নিয়ে আজ কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফিরছে। অন্যদিকে, নিজেদের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পথে ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল ও নারী ফুটবল দলের বর্তমান চিত্র।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কেন্দ্রীয় চুক্তির অধীনে খেলোয়াদের মাসিক বেতন দেন। এতে অনেকেরই বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আয়। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি রয়েছে টেস্ট, ওয়ানডে, টি টোয়েন্টির জন্য আলাদা ম্যাচ ফি। বিদেশি কোচিং স্টাফ, আধুনিক সরঞ্জামাদির পাশাপাশি অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছেই। এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স গড়পড়তা। এরপরও তারা নানা সময় নানা মন্তব্য ও কর্মকান্ডে উল্টো বোর্ড এবং দেশকে বিব্রত করে।
একেবারে উল্টো চিত্র বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সাবিনারা। কষ্টের দিন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো আরো সংগ্রাম করতে হয়েছে। বেতন বৃদ্ধির জন্য করতে হয়েছে আন্দোলন। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর বেতন বৃদ্ধি হলেও সেটা অনিয়মিত। সাফ খেলতে যাওয়ার আগে সাবিনারা সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পাননি। এক বছর ধরেই বেতন অনিয়মিত। দুই-তিন মাস পর এক মাসের বেতন পেয়েছেন। সাবিনা,কৃষ্ণা, সানজিদারা মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। বাফুফে নতুন চুক্তিতে একাদশে থাকলে ১০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি নির্ধারণ করেছে। সেই ফিও থাকে বকেয়া।
একদিকে যেমন বেতন নেই তেমনি নেই খেলার সুযোগও। বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রতিদিন অনুশীলন করলেও প্রস্তুতি ম্যাচ, টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পান কালেভদ্রে। বাফুফে অনেক সময় প্রীতি ম্যাচের জন্য দল ঠিক করে। পরে নানা কারণে সেই দল আসতে পারে না অথবা সাবিনাদের যাওয়া হয় না। আবার অনেক সময় অর্থের অভাবে বাফুফে সাবিনাদের খেলা আয়োজন করে দিতে পারে না।
পুরুষ ফুটবলাররা বিদেশে খেলার আমন্ত্রণ তেমন পান না। নারী ফুটবলারদের বিদেশে খেলার সুযোগ আসে হরহামেশায়। নারী ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছিল বাফুফে। সেই লিগের জন্য বাইরের দেশে খেলার অনুমতি পায়নি কয়েকজন নারী ফুটবলার। এতে আরো হতাশ হয়ে পড়েন ফুটবলাররা।
২০১৬ সাল থেকে বাফুফে ভবনে থাকেন নারী ফুটবালরা। সানজিদা-কৃষ্ণাদের মাধ্যমে শুরু হওয়া সেই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন অনেক নতুনরা। বাফুফে ভবনের চার তলায় কয়েকটি কক্ষে অনেক সময় ৭০ জন ফুটবলার থাকেন। এক রুমে ৬-৭ জনও থাকতে হয়। নারী ফুটবল দলে আবাসনও একটা সমস্যা।
ফুটবল এবং ইনজুরি সমার্থক শব্দ। ২০২২ সাফের ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। সাফের পর থেকে পায়ের আঙুল শুকিয়ে যাওয়ার রোগে ভুগছিলেন। ব্যথা কমছিল না এই ফরোয়ার্ডের। বাফুফের যেখানে কৃষ্ণার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা, সেখানে কৃষ্ণাকে ফিট না থাকায় ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার উপক্রম হয়েছিল। গণমাধ্যম ও ফুটবলপ্রেমীদের চাপে অবশ্য বাফুফে কৃষ্ণার ভারতে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করে ফেডারেশন।
গত দেড় বছরের মধ্যে নারী দলে কোচ পরিবর্তন হয়েছে কয়েকবার। নারী দলে ছোটন হেড কোচ থাকলেও মূল চাবিকাঠি ছিল ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির। ছোটন ও স্মলি চলে যাওয়ার পর সাইফুল বারী টিটু সাবিনাদের কোচ হন। বাফুফে কয়েক মাস পর টিটুকে বদলে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারকে আনেন নারীদের দায়িত্বে।
নতুন কোচ , নতুন তত্ত্ব। জুন ও জুলাইয়ে চাইনিজ তাইপে এবং ভুটানে সেই তত্ত্বের প্রয়োগ করেছিলেন পিটার বাটলার। এতে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। সাফে সেই দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের কোচের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও মাঠে শতভাগই দিয়েছেন। দেশের জার্সিতে কোনো কার্পণ্য করেননি।
বাংলাদেশে অনেক জাতির বসবাস। সবার একটাই পরিচয় বাংলাদেশি। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সবাই মিলে বাংলাদেশির দারুন উদাহরণ। চাকমা, গারো, সাওতাল ,বাঙালি সবাই বাংলাদেশের জন্য লড়েন ও জেতেন। আর ক্রিকেট দলে..