গাজীপুরে তুসুকা গ্রুপের ৬ কারখানা বন্ধ ঘোষণা, ১৮টিতে ছুটি ঘোষণা

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গ্রুপের মালিকানাধীন শতভাগ রপ্তানিমুখী ৬টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার সকালে কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ (লে-অফ) ঘোষণার নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাশিমপুর এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১৮টি কারখানায় আজ রোববারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব।

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুসুকা জিন্স লিমিটেড, তুসুকা ট্রাউজার্স লিমিটেড, তুসুকা প্রসেসিং লিমিটেড, তুসুকা প্যাকেজিং লিমিটেড, তুসুকা ডেনিম লিমিটেড এবং তুসুকা ওয়াশিং লিমিটেড।

কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশে উল্লেখ করেন, গতকাল শনিবার (২ নভেম্বর) থেকে শ্রমিকদের একটি দল কিছু অজ্ঞাতনামা বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনি ধর্মঘট শুরু করে।

কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিকেরা সকাল বেলা হাজিরা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে কারখানার প্রধান গেটে এসে জড়ো হয় এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানালেও শ্রমিকেরা তা অমান্য করে। শ্রমিকদের একটি অংশ অস্থিতিশীল আচরণ প্রদর্শন করে, যা দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং মারামারির মতো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

মালিকপক্ষের মতে, শ্রমিকদের এমন কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর আওতায় অবৈধ ধর্মঘট হিসাবে গণ্য হয়। শ্রমিকদের এহেন কর্মকাণ্ডে কারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সম্পত্তির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ায় তুসুকা গ্রুপ বাধ্য হয়ে ৩ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে কারখানাগুলোর কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এ বিষয়ে তুসুকা গ্রুপের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শ্রমিকেরা যদি তাদের অযৌক্তিক দাবি পরিত্যাগ করে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পুনরায় কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে মালিকপক্ষ পুনরায় কারখানাগুলো খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

শ্রমিকদের দাবি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে কারখানা এলাকায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের অনেকে দাবি করছেন, তারা হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, টিফিন বিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করেই ধর্মঘটে যাওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিল আজ কিছু কারখানায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। যার কারণে কারখানা শ্রম আইন অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ী-কাশিমপুর জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব বলেন, শনিবার শ্রমিকেরা ২১ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করে। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবি মেনে নিলেও শ্রমিকেরা তাদের দাবিতে অনড় থাকে। এ কারণে তুসুকা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানা ঘোষণা করেছে।

অপরদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল থেকে কাশিমপুর এলাকার ডোরিন গার্মেন্টস লি. এর শ্রমিকেরা অনুরূপ দাবিতে সকাল থেকে কারখানা ভেতরে আন্দোলন করে। পরে তারা কারখানার বাইরে এসে চন্দ্রা-আশুলিয়া সড়কে এসে অবরোধ সৃষ্টি করে।

এ সময় শ্রমিকেরা সড়কের দুইপাশের অন্যান্য কারখানার গেটে গিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের বিভিন্ন কারখানার মালিকেরা কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ডোরিন ও নরম্যানসহ ১৮টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কিন্তু চন্দ্রা-আশুলিয়া সড়কের পাশের নরম্যান নামের একটি কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সেখানে ডোরিনের শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে তারা সড়কে পুনরায় অবরোধ সৃষ্টি করে। বিকেল ৪টায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

জিএমপির কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, সকাল থেকে ডোরিনের শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছে। তাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য আশপাশের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের ডাকাডাকি করার কারণে কয়েকটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে। নরম্যান কারখানায় গিয়ে ডাকাডাকি করলে এ কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলনে যোগ দিতে অস্বীকার করায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। চন্দ্রা-আশুলিয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। আমরা চেষ্টা করছি শ্রমকদের বুঝিয়ে যান চলাচল শুরু করতে।