কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, দুর্নীতি, অনাচার, অবিচার, মিথ্যা মামলা, গুম, খুন ও হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বসবাসের অযোগ্য ও শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিবেশ তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছিল তারা। যারা গত ১৫ বছরের নতুন ভোটার হয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত কোনো ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোটাধীকার, ভাতের ও বিচারের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল। স্বাধীনভাবে পথ চলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে দেবীনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই স্বাধীন বাংলাদেশে কথা বলা ও মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। এই স্বাধীন বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখার সুযোগ আবারো আমরা পেয়েছি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লগি বৈঠার তাণ্ডবের কারণে গণতন্ত্র রুদ্ধ হয়েছিল। সেই থেকে বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছিল। এরপরে পিলখানায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে নষ্ট করে দিয়েছিল এবং দলীয় বাহিনী দিয়ে বিজিবি গঠন করে এই দেশের সীমানাকে অরক্ষিত করে দিয়েছিল। ৫ মে আলেম ওলামাকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইসলামী জনতাকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল যদি জামায়াত ইসলামকে নিষিদ্ধ করা যায় এবং এর নেতাদের খতম করে দেওয়া যায় তাহলে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। তার ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন শীর্ষ নেতাকে জেলখানায় রেখে এবং ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছিল তারা।
তিনি আরোও বলেন, জামায়াতের কয়েকশত নেতাকর্মীকে হত্যা করে এবং ২০ হাজার মামলা দিয়ে কয়েক লক্ষ নেতা কর্মীদেরকে ঘর-বাড়ি ও ব্যাবসা ছাড়া করা হয়েছিল। ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের প্রতিটি অফিসে তালা মেরে দেওয়া হয়েছিল। জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও দাঁড়িপাল্লা প্রতিকও কেঁড়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতো কিছুর পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৮ কোটি মানুষের দোয়া নিয়ে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছে।
জামায়াতের এই নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা জনগণের রক্ত চুষে খেয়েছে। পাড়া-মহল্লায় তারা ভিলেজ পলিটিক্স চালিয়েছে। এতে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় হওয়ার পাশাপাশি মানুষে-মানুষে হিংসা বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখনো ভিলেজ পলিটিক্সের অপচেষ্টা করছে। তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিকভাবে প্রতিহত ও বয়কট করতে হবে। তিনি আগামীদিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে সবার কাছে সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেবীনগর ইউনিয়ন সভাপতি মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গোলাম মূর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জেলা নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বকর, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মোখলেশুর রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে সেখানে বক্তব্য রাখেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আমির হাফেজ মাওলানা গোলাম রাব্বানী, সদর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল আলীম, সদর উপজেলা সেক্রেটারি গোলাম কবির, পৌর সহকারী সেক্রেটারি তোহরুল ইসলাম সোহেল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহর সেক্রেটারি প্রমুখ।