প্রান্তিক খামারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিপিএ এর পক্ষ থেকে সরকারকে প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্পের প্রান্তিক পোল্ট্রি খাতের সমস্যার সংকট সমাধানের দাবিগুলো বারবার বলার পরেও সরকার প্রান্তিক খামারিদের দিকে নজর দিচ্ছে না
উল্টো কর্পোরেট সিন্ডিকেটকে সরকার সহযোগিতা করছে
ডিম মুরগির বাজারের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় সরকারের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে, যাতে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে প্রান্তিক খামারিরা টিকিয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্য ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই সংকট দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।
বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানও এই সংকটের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি সরকারের পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে পোল্ট্রি খাতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে এবং প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বারবার দাবি জানানোর পরেও সরকার সিন্ডিকেটের ব্যবস্থা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতেছে প্রান্তিক সময় এদেরকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না যদি আমাদের দাবিগুলো “সরকার যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে আমরা পহেলা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় প্রান্তিক খামার বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।”
প্রান্তিক খামারি বাঁচলে দেশ বাঁচবে!
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেছে যা প্রান্তিক খামারিরা টিকিয়ে রাখতে, খাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অত্যন্ত জরুরি। দাবিগুলো হলো:
১. কর্পোরেট কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ফিড ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে সীমাবদ্ধ থাকবে
বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডিম ও মুরগি উৎপাদনেও অংশগ্রহণ করছে, যার ফলে ছোট খামারিরা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য, পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করছে যে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাজকর্ম ফিড ও বাচ্চার উৎপাদন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, যাতে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে।
২. বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে
কর্পোরেট কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদন প্রান্তিক খামারির জন্য ক্ষতিকর। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যায়, যা খামারিদের জন্য লাভজনক নয়। এই কার্যক্রম বন্ধ হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং খামারিরা লাভবান হতে পারবে।
৩. ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে
ফিড এবং মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি হয়, যা প্রান্তিক খামারিদের জন্য বড় সমস্যা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ানোর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছে না। এই সিন্ডিকেট বন্ধ করে, খামারিদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে
দেশের পোল্ট্রি খাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন না, যা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা তৈরি করছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়তে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য সঠিক দাম পায়।
৫. ক্ষুদ্র খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করতে হবে
খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে ঋণ ও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করা হলে তারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে।
৬. প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য
কর্পোরেট সিন্ডিকেট ও অসাধু কার্যক্রমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। এই প্রণোদনা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে সহায়ক হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
৭. আলাদা বাজার সুবিধা তৈরি করতে হবে প্রান্তিক খামারিদের জন্য
কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক খামারিদের জন্য আলাদা বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহ করতে পারে এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সঠিক মূল্য পায়।
৮. সরকারি নীতিমালা তৈরি করে কর্পোরেট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
পোল্ট্রি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করতে হবে, যাতে তারা শুধু তাদের স্বার্থে ব্যবসা না করে, বরং পুরো খাতের উন্নতি হয় এবং প্রান্তিক খামারি দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির সুফল পায়।
৯. কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ফাঁদ বন্ধ করতে হবে
বর্তমানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিস্টেমটি বন্ধ করা জরুরি, যাতে খামারিরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালাতে পারে এবং নিজেদের লাভের ভাগ পেতে পারে।
১০. প্রান্তিক খামারিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করতে হবে
খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা চালু করতে হবে। এটি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং একই সাথে তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন তার সদস্যদের স্বার্থে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, দেশের পোল্ট্রি শিল্পে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, প্রান্তিক খামারিরা বাঁচবে, এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।