সন্তানের বয়স তিন বছর পেরোতে না পেরোতেই বাবা-মা ভালো স্কুল খুঁজতে শুরু করে দেন। কারণ সন্তান বড় হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু হয়। বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে হয়। ছোট থেকেই এখন বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করে। অনেকে বাচ্চাকে প্রি স্কুলেও পাঠাচ্ছেন। তবে সঠিক বয়সে স্কুলে পাঠানোর আগেই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ বাচ্চার স্কুলজীবন শুরুর মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, লেখাপড়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সবকিছুই অভ্যস্ত করাতে হয়। স্কুলে ভর্তির আগে প্রস্তুতি থাকলে পরিস্থিতি সামলে নেওয়া কিছুটা সহজ হয়। স্কুলে ভর্তি শিশুর সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশও ঘটে। তাই সবদিক থেকেই বাচ্চাকে প্রস্তুত করে নেওয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব।
স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতেই প্রস্তুতি হিসেবে সন্তানকে কিছু বিষয় শেখাতে হবে। যেমন-
১. প্রথমে ‘কিন্ডারগার্টেন’ বা ‘প্লে স্কুল’ দিয়ে নিয়মিত বাড়ির বাইরে থাকার অভ্যাস করাতে হবে সন্তানদের। প্লে স্কুল শুরুর দিকে বেশ কিছুক্ষণ মা-বাবাকে দেখতে না পেলে কান্নাকাটিও করে শিশুরা। তাই শুরুর দিকে তাদের পাশে থাকতে হবে।
২. একটি শিশু প্লে স্কুলে থাকার অভ্যাসে ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে থাকার অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বাড়ির বাইরে স্কুলই তখন হয়ে ওঠে বাচ্চাদের বৃহত্তর পরিবার। মা-বাবা, কিংবা কাছের মানুষদের ছেড়ে অন্য পরিবেশে, বৃহত্তর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুরা যাতে মানিয়ে চলতে পারে। স্কুলে যাওয়ার আগেই অন্য শিশুদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে গেলে কোন কোন জিনিস শেখানো যায় সেসব বিষয় শিশুকে শেখাতে হবে।
৩. ভাগ করে নেওয়া : চকোলেট হোক বা পড়ার বই পাশে থাকা বন্ধুটির সঙ্গে ভাগ করে নিতে শেখাতে সন্তানকে। পাশাপাশি নিজের আবেগ, অনুভূতি, চাহিদাও প্রকাশ করতে শেখাতে হবে। বাড়ির সদস্যদের দিয়েই শুরু করুন এ অভ্যাস।
৪. গায়ে হাত না তোলা : প্রত্যেকের জীবনেই ব্যক্তিগত পরিসর রয়েছে। সেই পরিসরকে সম্মান করতে শেখাতে হবে। কোনো কথা সেই বন্ধুটি বলতে না চাইলে, তাকে জোর করা উচিত নয়। সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হলেও মজা করে তার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা যায় না, এই সব বিষয়ে সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
৫. শ্রদ্ধা করা : মা-বাবা বা পরিবারের অন্য সবার মতো স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধা করতে শেখাতে হবে ছোট থেকেই। এমন কোনো কথা, যা সম্মানজনক নয়, সন্তানের সামনে সেগুলো ব্যবহার করা থেকে নিজেদের বিরত থাকতে হবে।
৬. কোনো বিষয় চটপট শিখে নেওয়া : স্কুলে গিয়ে অন্য বন্ধুদের মতো চটপট করে সব বিষয় বুঝতে না পারলে অনেক সময়ে শিশুর মনে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে। তাই স্কুলে যাওয়ার আগে থেকেই শুধু মুখস্থ না করে যে কোনো বিষয়কে মন দিয়ে বুঝতে বা আত্মস্থ করতে শেখাতে হবে।
৭. দায়িত্ব নিতে শেখা : বাড়ি থেকেই সন্তানকে ছোট ছোট দায়িত্ব নেওয়া শেখাতে হবে। নিজে হাতে খাবার খাওয়া, নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখা, মল-মূত্র ত্যাগ করার পর পরিষ্কার করা যেন কারও সাহায্য ছাড়াই করতে পারে এই অভ্যাস করাতো হবে।