সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপঃ গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনাটি ২২ ডিসেম্বর রবিবার সিরডাপ মিলনায়তনে (সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক) অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে আলোচকের মধ্যে ছিলেন; গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান, কামাল আহমেদ; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম; সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর চেয়ার মুনিরা খান; সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান; দৈনিক মানব জমিন, প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী; সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ; বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, মাহবুব মোর্শেদ; ডিজিটালি রাইট বিডি-এর প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী; গণযোগাযোগ ও সাংবাধিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এস এম শামীম রেজা; এএফপি, ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির; দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক জায়মা ইসলাম; সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল; সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি; এনএইচকে টেলিভিশন-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি পারভিন এফ চৌধুরী; জৈষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ ও নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান।
সংলাপের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার বহুল আলোচিত বিষয়। ১৯৭১ এর পর থেকেই আমাদের মুল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক হওয়ার। কিন্তু আমরা বারবার হোঁচট খেয়েছি। দোষটা আমরা সাধারণত সরকারকে দিয়ে থাকি। কিন্তু তিনি একাই এমন করতে পারে না। তাকে সাহায্য করার অনেক মানুষ থাকে। ১৯৬৯ এর পরে একটা রুপরেখা তৈরি করা হয়। ২০০৭ – ০৮ এ আবার সংস্কারের কথা উত্থান হয়। কিন্তু তা ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়। ২০২৪ এর পর আবারও সংস্কার বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
একসময় বাংলাদেশের গণমাধ্যম খুবই ভাল ছিল, সাংবাদিকরা সাহসিকতার পরিচয় দিত। কিন্তু গত কয়েক বছর সাংবাদিকরা অনেক হয়রানির স্বীকার হয়েছে। গণমাধ্যমকে পাপেট মিডিয়া হিসেবে পরিনত করা হয়েছে। এখন নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি গণমাধ্যমের পরিবর্তন সম্ভব হয় না।
কামাল আহমেদ বলেন, আমরা ৩২ টি আইন পেয়েছি যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে। প্রেস কাউন্সিল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটাকে ঠিক করার জন্য আমরা কি কি করতে পারি তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি সার্ভে করছি যে জনগণ কি আমাদের উপর আস্থা রাখে কিনা, না রাখলে কি করা যেতে পারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। গত ৫৩ বছরের মধ্যে এটি প্রথম সরকারি গণমাধ্যম জরিপ সম্পূর্ণ বাংলাদেশ জুড়ে। মিডিয়া মালিকানা নিয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। গণমাধ্যমের মানুষরা যেন তারা তাদের সমস্যা বলতে পারে ও সমাধান দিতে পারে, এটি নিয়ে কাজ করছি। কমিশন সাংবাদিকদের বেতন নিয়ে কাজ করতে পারবে না, তবে কমিশন যা করতে পারে যে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে দিতে পারে। মিডিয়া নিজদের সম্পাদকের মূল্যায়ন করে না। এটি করা দরকার নিজের ভুল ধরার জন্য। সেলফ সেন্সরশিপ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এটা নিজেকেই তাড়াতে হবে।
গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও ইউনিয়ন বিভাজন অনেক। এটা নিরসন করতে পারলে অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তন হয় না এমন না। এটা নির্ভর করে সরকারের উপর কতটা চাপ দেওয়া যায় সংস্কার করার জন্য। গত ১৫ বছরের কন্টেন্ট আলোচনা করে দেখতে হবে। বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এর জন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে যেন তারা বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সাংবাদিকদের জন্য মিনিমাম বেতন থাকতে হবে যা পুরো দেশব্যাপী হতে হবে।
সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করবে, বিজ্ঞাপন না। গত সরকার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে যে চাবে সেই সাংবাদিকতা করতে পারবে। এমন কিছু সংবাদ আছে যাদের মিশন কোন আওয়ামী লীগের আদর্শ প্রচার করা। এই সংবাদমাধ্যম এখনও চালু আছে। টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিকানা একই ব্যক্তি বাংলাদেশে বহুল দেখা যায়। এতে একচেটিয়া ব্যবসা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকতে হবে যে তাদের স্বার্থ কি। এটার নিশ্চয়তা সম্পাদকরা করবে। বাংলাদেশের সব পত্রিকা ও টেলিভিশন সম্পাদকরা মিলে আলোচনা করে একটি ভাল সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করবে।
শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকরা যেন নিজেদের মত কাজ করতে পারে। মিডিয়া গত ১৫ বছর জনগণের কথা শুনে নাই। যার জন্য বলা হয় কিছু মিডিয়ার হাতে রক্ত আছে। গণমাধ্যম কমিশন করা হয়েছে যেন সাংবাদিকরা তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে। গণমাধ্যম ব্যর্থ হয়েছে মানবাধিকার রক্ষায়। সাংবাদিকদেরকে সঠিক তথ্য দিতে হবে যেন কারো জীবন নষ্ট না হয়। সাংবাদিকদের যেমন অধিকার আছে তেমন জনগণেরও অধিকার আছে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ন্যূনতম বেতন সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। সাংবাদিকদের এখানে জোর দিতে হবে। কন্টেন্ট চুরি করা বন্ধ করতে হবে। কঠোর কপিরাইট আইন লাগবে। কন্টেন্ট নিরাপত্তার জন্য কঠোর আইন লাগবে। কন্টেন্ট নিরাপত্তা না থাকার জন্য সাংবাদিকরা বেতন কম পায়। ইউনিয়নগুলোকে শক্তিশালী হতে হবে। নতুন বাংলাদেশে নতুন ইউনিয়ন লাগবে, যারা পূর্বাচলের প্লটের পিছনে ছুটবে না। সাংবাদিকদের জন্য যেন কারো মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয়, সেদিকা খেয়াল রাখতে হবে।
আবু সাইয়িদ বলেন, সংবিধানে যা আছে তা বাস্তবে নেই। আমদের দেশে গণতন্ত্র থাকলে আমাদের এই অবস্থায় আসতে হত না। এখন সময় এসেছে আমাদের পরিবর্তন আনার। মিডিয়াগুলোকে সরকারের মুখোমুখি দাড়িয়ে জবাব আদায় করে নিতে হবে। আমাদেরকে আগামীর দিকে তাকাতে হবে। যদি প্রেস কমিশন করা হয় সেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। সাংবাদিকদের সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কার শুনলেই ভয় লাগে। সংবাদপত্রের বন্ধের কাহিনী আগেও হয়েছে। আমি ভীত এমন আবার হয় কিনা। বর্তমান সরকার আমাদেরকে লিখতে বললেও আমরা পারছি না। সেলফ সেন্সরশিপ আমাদেরকে কাবু করে ফেলেছে। সংস্কার হওয়া উচিত ইতিহাসে। আমাদের দেশে সরকার বদলালে ইতিহাস বদলে যায়। এমন হওয়া যাবে না। লাইসেন্সিং এর প্রক্রিয়া আমরা অনেক বড় করে ফেলেছি। পত্রিকাগুলোর উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এক্রেডিশন যেই কমিটি নিয়ে করা হয় তারা সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা না করে নিজেরা করে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ছোট সাংবাদিকতার উদ্যোগগুলোর উপর নজর দিতে হবে। ব্যাক্তি সাংবাদিকদের উৎসাহিত করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে দক্ষ হতে হবে এবং সিটিং কোন বিচারপতি এখানে থাকবে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি না। প্রেস কাউন্সিলকে সিভিল আদালত হিসেবে তৈরি করতে হবে। নতুন যারা এই গণমাধ্যম শিল্পে আসতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে।
মুনিরা খান বলেন, মিডিয়াতে যারা কাজ করে তারা অনেক মূল্যবান দায়িত্ব পালন করে। সবাই যে টাকার জন্য কাজ করে এমন না। এখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব কাঠামো ঠিক করতে হবে। গণমাধ্যমে কিছুটা প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। সরকারকে শ্রমিক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন সকল সাংবাদিকরা তাদের ন্যায্য বেতন পায়। সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক আইন ঠিক করতে হবে। এডিটরিয়াল স্বচ্ছতা থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের উচিত যেসব সংবাদপত্রগুলো ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। কর্পোরেট বিনিয়োগ থাকবে কিন্তু নতুন বিনিয়োগ আনার জন্যও চিন্তা করতে হবে। এতে প্রতিযোগিতা থাকবে। ভাল বিনিয়োগ আসলে ভাল সাংবাদিক আসবে। তারা এই সাংবাদিকতা শিল্প ছেড়ে চলে যাবে না।
ড. এস এম শামীম রেজা বলেন, সংবাদপত্র একটা বাণিজ্য ও একই সাথে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। এখানে ভারসাম্য আনতে হবে। জনগণ গণমাধ্যমের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। জনগণ কতটুকু গণমাধ্যমকে ভরসা করে তা নিয়ে প্রতিবেদন করতে হবে। সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। মুদ্রিত আকারে নীতিমালা থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক সহজিকরণ করতে হবে। সাংবাদিকতার মান উন্নত করতে হবে। সাংবাদিকতার ক্রিমিনালাইজেশন কমাতে হবে। স্থানীয় সাংবাদিকদের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের কোয়াজি জুডিশিয়াল ব্যপ্তি বাড়াতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরীর নিরাপত্তা দিতে হবে ও বেতন সঠিক সময়ে দিতে হবে।
কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ভুয়া তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এটি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে। যখন প্রমাণ পাওয়া যায় যে কোন সংবাদপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা দেওয়া হলে তা কি সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ হবে কিনা? বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহযোগিতা করছে বা ফ্যাসিবাদিকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে তা কি গণমাধ্যম করার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হবে কিনা?
জায়মা ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে কর্পোরেট দ্বারা গণমাধ্যম পরিচালিত। এটা সহজে পরিবর্তন হবে না। এটা ঠিক কোন সমস্যা না। কিন্তু এখানে চেক্স এন্ড ব্যালেন্স থাকা উচিত। জাতীয় প্রেস ক্লাবকে সংস্কার করা উচিত। প্রেস ক্লাবের সদস্য হবে যোগ্য সাংবাদিকরা। যারা আসলে সাংবাদিকতার জন্য কাজ করতে চায়। প্রেস ক্লাবের কোড অফ কন্ডাক্ট তৈরি করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে বলিষ্ঠ করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে বোর্ড নির্ধারণ করবে, সরকার নয়। বোর্ডে কারা থাকবে তা অ্যাসোসিয়েশনগুলো ঠিক করবে। অ্যাসোসিয়েশন যদি কোন টাকা নিয়ে থাকে বড় ব্যবসায়ী থেকে তাদেরকে দুদকের মামলায় আনা উচিত।
সাংবাদিকরা বেতন ঠিক মত পায় না ইউনিয়নগুলো এগুলো কেন দেখেছে না? ইউনিয়নগুলোর রাজনীতিকরণ করা যাবে না। সাংবাদিকতার জন্য লাইসেন্সসিং রাখা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা দেয়। এটি বাদ দিতে হবে। এটি থাকলে সঠিক সাংবাদিকতা করা যায় না।
মাসুদ কামাল বলেন, সাংবাদিকরা নিয়মিত বেতন পায় না বা সামান্য দেরি হলে খারাপ কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ৮০% সাংবাদিক ১০,০০০ টাকার কম বেতন পায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা বেতনই পায় না। সাংবাদিকরা এখন ব্যবসায়ীদের হাতের জিম্মি। অভুক্ত একজন সাংবাদিককে যদি বলা হয় তার নীতি নেই, এটা বলা শোভা পায় না। মালিকরা বিজ্ঞাপনের পিছনে ছুটে। বিজ্ঞাপনের টাকা নিজেরা আত্মসাৎ করে কিন্তু অন্যদিকে সাংবাদিকদের সঠিক সময়ে বেতন দেয়া হয় না মাসের পর মাস। কেউ এই বিষয়ের উপর নজর দেয় নি।
আবু সাঈদ খান বলেন, পরিবর্তন দরকার কিন্তু তা কে করবে? অতীতে সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ৯০ এর পর তা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে সংবাদপত্রগুলো তার জন্য কাজ করে থাকে। এখানে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। সাংবাদিকরা এখানেই স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। সাংবাদিকরা দলীয় আদর্শ পালন করা শুরু করে দিয়েছে। সাংবাদিকদের যে প্রতিবাদের কণ্ঠ থাকার দরকার তা তারা হারিয়ে ফেলছে। সরকারের সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ দূর হবে। গণমাধ্যমের কালো আইন বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক সরকার আসলে এই আইনগুলো বাতিল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এটি বর্তমান সরকারকে তাড়াতাড়ি করতে হবে। প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকার বড় জোর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে নীতিমালা তৈরি করতে পারে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, অধিকার ও কর্তব্যের মাধ্যমেই একজন নাগরিক হয়ে উঠে। আমরা অধিকারের দিকেই থাকতে চাই। সাংবাদিকতার কিছু নিয়ম থাকা উচিত যে সে কি করতে পারবে বা করতে পারবে না। নিয়মগুলো মানা হচ্ছে কিনা তা প্রেস কাউন্সিল খেয়াল রাখবে। প্রেস কাউন্সিলের বিচারিক ক্ষমতা থাকতে হবে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিনিয়োগ থাকবেই। এবং একসময় সংবাদ ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগবেই। এখানে নজর দিতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরীর নিরাপত্তা দিতে হবে। সংবাদপত্রের মালিকানার পারসেন্টেজ ৫০ পারসেন্টের বেশী থাকবে না। কালো আইন থাকা উচিত না। আদালত অবমাননার নামে এখনও অনেক কিছু করা হয় সংবাদমাধ্যমের উপর। সাংবাদিকরা আদালতের রায় নিয়ে বিতর্ক করতে পারবে কিনা তা নিয়ে পরিষ্কার করে বলতে হবে।
পারভিন এফ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদের কাজের জন্য। সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে খারাপ প্রতিযোগিতা করে থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়ার। সংবাদমাধ্যমগুলো সংবাদ করে থাকে নিজদের স্বার্থের জন্য। সাংবাদিকতার জন্য নয়। সেলফ সেন্সরশিপ থাকতে থাকতে আমরা সাংবাদিকতা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি।
এম এ আজিজ বলেন, সাংবাদিকতার আগে গনতন্ত্র দরকার। আমরা স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সংবাদপত্র রিলেটেড প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করা দরকার। ক্রস চেকের মাধ্যমে সাংবাদিকতা করতে হবে। আগে ইউনিয়ন প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করত সরকারের উপর। এখন এমন নেই। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। গনতান্ত্রিক চর্চার উপর আস্থা আনতে হবে। গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।
তুহিন খান বলেন, আমাদের গণমাধ্যমের যেই চরিত্র তৈরি হয়ছে তা সরকার যাওয়ার পরও তেমন কোন পরিবর্তন হয় নি। জনগণের জন্য সাংবাদিকতা তারা এখনও করছে না। এই মৌলিক পরিবর্তনটা দরকার। গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম এখনও ক্লিক বেইট এর মত কাজ করছে। কালো আইনগুলো বাতিল হওয়া দরকার। সংবাদ জনবান্ধব হওয়া উচিত। চ্যানেলগুলোর জন্য স্বাধীন সাবস্ক্রিপশন চালু করা দরকার। চ্যানেলের জাতীয়করণ করা উচিত হবে না। গণমাধ্যমের সাংবাদিকতার স্বাধীন অবজেক্টিভ থাকা উচিত।