উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি হলেন আ.লীগ নেত্রী

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেত্রীকে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি করে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা। ২০ ডিসেম্বর জেলা মহিলাদলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন শোভা ও সাধারণ সম্পাদক মৌসুমি আকতার তমা কমিটির অনুমোদন দেন।

৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে আরজিনা পারভিন চাঁদনীকে উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি করা হয়। তিনি বর্তমানে পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেত্রী। এছাড়া সাংগঠনিক পদে নাজিমা বেগমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনিও উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের সভানেত্রী (সভাপতি)।

সেই অনুমোদন হওয়া কমিটি ফেসবুকে প্রচার করা হলে তা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরপর থেকে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের যে নারীকে সভাপতি করা হয়েছে তার নাম আরজিনা পারভীন চাঁদনী। ইতঃপূর্বে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি সেই সময় বিএনপির বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এটি নিয়ে বিএনপিসহ এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করছেন যে টাকার বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে।

পলাশবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পলাশবাড়ী উপজেলা বিএনপির মহিলাদলের কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে ৫ আগস্টের পূর্বে দলের পক্ষে তাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না। অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই কমিটি বাতিলের দাবি করেন তিনি।

গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মিল্লাত সরকার মিলন বলেন, সাড়ে ১৫ বছরের লড়াই সংগ্রামে যাদের কোনো ছায়া পর্যন্ত কেউ দেখেনি, তারা কীভাবে পদ পান?

জেলা বিএনপির সহসম্পাদক মিজানুর রহমান নিক্সন বলেন, মাঠে লড়াই সংগ্রাম আমরা করি। হঠাৎ করে কেউ যদি এসে বলে আমি সভাপতি, তাকেতো আমরা কেউ মেনে নেবো না। ৫ আগস্টের পরে জন্ম নেওয়া কোনো নেতা পলাশবাড়ীতে রাজনীতি করতে পারবে না। তাই এই কমিটির কোনো গ্রহণযোগ্যতা আমাদের কাছে নেই।

উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর সরকার মিনু বলেন, যিনি আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন কিনেছেন, তিনি কীভাবে মহিলা দলের সভাপতি হন? যারা এই কমিটি দিয়েছেন তারা কি অন্ধ? কোনো খোঁজ-খবর না নিয়ে কমিটি দিয়েছেন। আমরা জিয়ার সৈনিক, রাজপথ আমাদের ঠিকানা। আমরা কখনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের দলে নেবো না।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার বিষয়ে আরজিনা পারভীন চাঁদনী বলেন, আওয়ামী লীগ করার প্রশ্নই ওঠে না, এ রকম ছবি বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও রয়েছে৷ আমার বাবা ও পরিবার বিএনপির রাজনীতি করেন এবং এখনো একজন জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের সভানেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, উপজেলা মহিলা দলের কমিটির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

বিভিন্ন কমিটিতে আওয়ামী লীগের লোকজন ঢোকায় তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, অনুবেশকারীদের দলে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য এসব করা হচ্ছে।