কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন। গতকাল রোববার দুপুরের দিকে ওই মুক্তিযোদ্ধার নিজ এলাকা চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। রাতে তাঁর জুতার মালা পড়া ও এলাকায় ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়ার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ওই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে রাতে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। আওয়ামী লীগের তৎকালীন স্থানীয় এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধের কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয় ওই সময়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে মজিবুর হকের নির্দেশে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা তখন আব্দুল হাই কানুর বাড়ি একাধিকবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। রোববার সকালে তাকে একা পেয়ে স্থানীয় ১০-১২ জন ব্যক্তি গলায় জুতার মালা দেয় তার।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসে থাকা আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০-১২ জন আওয়ামী লীগ আমলে তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা দিয়ে তাকে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে আর এলাকায় আসবেন না বলেও জানান। এ সময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেওয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা?’ অন্যরা বলতে থাকে, ‘কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, এলাকা ছেড়ে দাও।’
এ বিষয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করে। বিচার কার কাছে চাইব, মামলা দিয়ে আর কী হবে।’
রাতে সাড়ে ১১টার দিকে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে অবগত করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ করবেন না বলেও জানান। তবে রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আবারও তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দেবেন কিনা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।’
ঘটনার বিষয়ে রাতে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী আবুল হাসেম আমাদের দলের কেউ না। তবে সমর্থক কিংবা অনুসারী হলেও হতে পারে। এ বিষয়ে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’