রাজস্ব আয় বাড়াতে পর্যটন খাতে নজর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই লক্ষ্যে রিসোর্ট, পিকনিক স্পট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ভিলা, বাংলো, কমিউনিটি হল, ডে ট্যুর প্যাকেজ পরিচালনাকারী স্থাপনা বা বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহৃত খাত থেকে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আহরণ ত্বরান্বিত করতে বেশকিছু টিম গঠন করেছে সংস্থাটি।
ওই টিমগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে রাজস্ব আহরণের জন্য হিসাব সংগ্রহ করছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (পূর্ব) প্রথম এ উদ্যোগ নেয়। বাকি ১১টি কমিশনারেটও ওসব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহে নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শীতকালে সাধারণত ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, ইভেন্ট, মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি পরিমাণে আয়োজন হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ওসব খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর প্রচেষ্টা ছিল। কিন্তু কখনোই কাক্সিক্ষত পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়নি। সেজন্যই গঠন করা হয়েছে সরেজমিন পরিদর্শনে দল। ওসব দল অনুষ্ঠানে আসা অতিথি সংখ্যা ও বুকিং তালিকা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান যথাযথ রাজস্ব জমা দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করবে।
এমনকি অগ্রিম বুকিং দেয়া অনুষ্ঠানের অতিথির সংখ্যাও যাচাই করে দেখা হবে। পাশাপাশি কোনো বুকিং বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ওই তথ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব সার্কেলকে জানাতে হবে। কারণ ঢাকার নামি-দামি রিসোর্ট সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে সরেজমিন পরিদর্শন শুরু করার ফলে ৭০-৮০ শতাংশ কর (ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক) আদায় সম্ভব হচ্ছে। না হলে তা আদায় করা যেত না। যেসব স্পটে বার রয়েছে, মদজাতীয় পানীয় বিক্রি হয়, সেখানে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আদায় করা হয়। এনবিআরের সব টিমের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ভালো সাড়া মিলছে।
সূত্র আরো জানায়, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পূর্ব) ডেমরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, সোনারগাঁ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নরসিংদী ও রূপগঞ্জ- আটটি বিভাগীয় কার্যালয়ের জনবল নিয়ে ১৩টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রায় দু’শ’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই ১৩টি টিমে কাজ করছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ওসব টিম সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিনই শেষ করা হচ্ছে। ওসব টিম যত ধরনের মূসক ও সম্পূরক শুল্ক রয়েছে তার সবই আদায় করছে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট পশ্চিমের আওতাধীন বিভাগীয় কার্যালয়গুলো হলো মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সাভার, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ধামরাই। এ ব্যাপারে এনবিআর সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মো. আবদুর রউফ জানান, বর্তমান অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বর্তমান পর্যটন মৌসুমে ভ্যাট অফিসারদের নিয়ে অনেকগুলো টিম গঠন করা হয়েছে।
টিমগুলো সারা দেশের পর্যটন স্পট, হোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি পরিদর্শন করে হিসাব সংগ্রহ করছে। তবে এমনও দেখা গেছে যে একটা আবাসিক হোটেলে মাত্র কয়েকজন গেস্ট আছেন। নানা কারণে সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসেনি, এ বিষযটা বোঝা যাচ্ছে। উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি না থাকায় উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত সব খাতে মন্দা ভাব বিরাজ করছে।
এ অবস্থার উন্নতি না হলে অর্থবছর শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।