ন্যায্যমূল্যে ডিম-মুরগি বেচবে বিপিএ

# সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে স্বস্তি ফিরবে না

# প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে ১০ দফা দাবি

বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির পরিস্থিতিতে রমজানকে সামনে রেখে ১২ জানুয়ারি (রোববার) থেকে ঢাকার ১০০টি পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যে ডিম, মুরগি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।

প্রাথমিক ভাবে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করবে সংস্থাটি।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার।

সুমন হাওলাদারের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস খন্দকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাউছার আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মেজবাউল হক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ। এছাড়া, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিরা। সিন্ডিকেটের হাত থেকে প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে এ সময় ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বেশিরভাগ সময়েই অস্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। ডজনপ্রতি ডিমের দাম উঠেছিল ১৮০ টাকায়। দাম বেঁধে দেয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। তবে নভেম্বরে ১৮ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে নতুন বছরের শুরুতেই আবারো ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও।

অনুষ্ঠানে সুমন হাওলাদার বলেন, আসন্ন রমজান উপলক্ষে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রির কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। 

এছাড়া বিপিএর সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে দক্ষ ব্যক্তি ও উদ্যোক্তা। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কিছু সংখ্যক স্মার্ট ছাত্র যারা কৃষি খাত এবং ভোক্তা-উৎপাদকের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।

তাদের দক্ষতা এবং উদ্যমের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি আরও কার্যকরী হবে, যা দেশের কৃষি খাতের উন্নতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। অভিযোগ করে বিপিএ সভাপতি বলেন, বছরে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। তাদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় কমছে না ডিম-মুরগির দাম। ভাঙ্গা যাচ্ছে না সিন্ডিকেট।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও দেশের বাজারে না কমায় মুরগির দামে প্রভাব পড়ছে। সরকারের নীতি নির্ধারণী বৈঠকে প্রান্তিক খামারিদের রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

খামারিদের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চার সরবরাহ নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন সুমন হাওলাদার।
 

১০ দফা দাবিগুলো হচ্ছে —

১. বর্তমানে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ডিম ও মুরগি উৎপাদনে অংশ নিয়েছে। যার ফলে ছোট খামারিরা বাজারে অবস্থান নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা দাবি করছে যে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। যাতে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারেন।

২. কর্পোরেট কোম্পানির বাণিজ্যিকভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদন প্রান্তিক খামারিদের জন্য ক্ষতির কারণ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যায়। যা খামারিদের জন্য লাভজনক নয়। এই কার্যক্রম বন্ধ হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং খামারিরা লাভবান হতে পারবেন।

৩. ফিড এবং মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি হয়, যা প্রান্তিক খামারিদের জন্য বড় সমস্যা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়ানোর ফলে খামারিরা তাদের উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছেন না। তাই এই সিন্ডিকেট বন্ধ করে, খামারিদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ফিড ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. দেশের পোলট্রি খাতে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন না, যা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সমস্যা তৈরি করছে। বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়তে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য সঠিক দাম পায়।

৫.খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করতে ঋণ ও ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করা হলে তারা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং দেশীয় পোলট্রি শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে।

৬. কর্পোরেট সিন্ডিকেট ও অসাধু কার্যক্রমের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। এই প্রণোদনা তাদের ব্যবসা
চালিয়ে যেতে সহায়ক হবে এবং তাদের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

৭. কর্পোরেট কোম্পানির আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক খামারিদের জন্য আলাদা বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহ করতে পারে এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সঠিক মূল্য পায়।

৮. পোলট্রি খাতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা রোধ করতে হবে, যাতে তারা শুধু তাদের স্বার্থে ব্যবসা না করে বরং পুরো খাতের উন্নতি হয় এবং প্রান্তিক খামারি দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির সুফল পায়।

৯. বর্তমানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রান্তিক খামারিদের ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিস্টেমটি বন্ধ করা জরুরি। যাতে খামারিরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালাতে পারে এবং নিজেদের লাভের ভাগ পেতে পারে।

১০. খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা চালু করতে হবে। এটি তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং একই সাথে তাদের ব্যবসার উন্নতি ঘটাবে।