ইসরায়েলি কারাগারে ১৪ মাসে কোরআন হিফজ করেন ফিলিস্তিনি এই তরুণ

দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর কারাগারে বন্দী জীবনে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছেন ইসলাম আল মালিকী নামের এক ফিলিস্তিনি তরুণ। কারারক্ষীদের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা ১৪ মাস সময় নিয়ে তিনি কারাগারে পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে তাকে রামাল্লায় তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পশ্চিম তীরের অফের কারাগারে বন্দী করা হয়। সেখানে তিনি জানুয়ারী পর্যন্ত বন্দী ছিলেন।

আল-মালিকি বলেছেন, আটকের পর প্রথম দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি নির্জন তদন্ত কক্ষে রাখা হয়েছিল। এ সময় তিনি জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। মূলত এই সময়েই তিনি কারাগারে পুরো কোরআন মুখস্ত করার পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, যখন তারা আমাকে অফার কারাগারে স্থানান্তরিত করেছিল, আমি কারাগারের পরিস্থিতি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কারণ গাজা যুদ্ধের আগে কারগারের যে পরিস্থিতি ছিল তা বর্তমানের তুলনায় স্বর্গ ছিল বলা যায়। আমাকে দিনে ১০ মিনিটের বেশি বাইরে বের হতে দিতো না। সেখানে আবহাওয়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ছিল। কিন্তু গরমের কাপড় বা কম্বল ছিল না। পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল।

সূরা লুকমানের মাধ্যমে তিনি হিফজ শুরু করেন। এ সময় তার কক্ষে আরও দুজন বন্দী ছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে পুরো কোরআন হিফজ করেন।

জেলে কোরআন হিফজ করার সময় ইসরায়েলি কারারক্ষীদের বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তারা। কোরআন তিলাওয়াত করলে কারারক্ষীরা চিৎকার করে তাদের ধমক দিয়ে বলতো, এখানে কোরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ। এমনকি তারা নামাজ আদায়েও বাধা দিতো।

ইসলাম আল মালিকী সূরা কাসাসের মাধ্যমে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। যখন তিনি সূরা কাসাসের ৮৫ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করেন, যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

اِنَّ الَّذِیۡ فَرَضَ عَلَیۡكَ الۡقُرۡاٰنَ لَرَآدُّكَ اِلٰی مَعَادٍ ؕ قُلۡ رَّبِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَنۡ جَآءَ بِالۡهُدٰی وَ مَنۡ هُوَ فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

নিশ্চয় যিনি তোমার প্রতি কোরআনকে বিধানস্বরূপ দিয়েছেন, অবশ্যই তিনি তোমাকে প্রত্যাবর্তনস্থলে ফিরিয়ে নেবেন। বল, ‘আমার রব বেশী জানেন, কে হিদায়াত নিয়ে এসেছে, আর কে রয়েছে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায়’। (সূরা কাসাস, আয়াত : ৮৫)

তখন তিনি অনুভব করেছিলেন যে, সবকিছুর শেষ পরিণতি আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে, তাই জান্নাত লাভের জন্য নেক আমলে সময় ব্যয় করা উচিত।

বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও দখলদার ইসরায়েলের কারাগারে ইসলাম আল মালিকীর কোরআন হিফজের ঘটনায় আনন্দিত তার বাবা মুহাম্মদ আল-মালিকি।

তার বাবা বলেন, একদিন আমি আমার ছেলেকে কোরআনের হাফেজ হিসেবে দেখবো এমনটাই আমার ইচ্ছা ছিল, আমি প্রত্যাশা করি প্রত্যেক বন্দী কারাগারে কোরআন হিফজের মতো মহৎ কাজে তাদের সময় ব্যয় করবেন।

সূত্র : আল জাজিরা মুবাশির