সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেলসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

রোববার দুদকের পৃথক তিনটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজ, বেনাপোল কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী, তার স্ত্রী হোসনা ফেরদৌস সুমি।

দুদকের উপসহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে তিনটি আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

মোজাম্মেল হকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা:

সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনটি করেন দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

আবেদনে বলা হয়, আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজে কমিশন গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করে বিদেশে পাচারসহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তার বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত আবশ্যক।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা:

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব সালাম।

আবেদনে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আজিজসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ পূর্বক বিদেশে অর্থ পাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ফরিদ আজিজ গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় তিনি দেশত্যাগ করলে সার্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফরিদ আজিজ যেন অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রয়োজন।

স্ত্রীসহ যশোর কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা:

বেনাপোল কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী ও তার স্ত্রী হোসনা ফেরদৌস সুমির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

আবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইসহ ঘুস, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আবেদনকারীকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগসহ বিভিন্ন গোপনীয় উৎসের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে দেশে ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাছাড়া তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ শেয়ারবাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার অবৈধ অর্জিত অর্থ তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং বিভিন্ন মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন বলেও অনুসন্ধানকালে তথ্য পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধান কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। তাই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।