এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম ম্যাটস শিক্ষার্থীদের, দাবি না মানলে লং-মার্চ

চার দফা দাবি আদায়ে এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণের কোনো ঘোষণা না আসলে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লং-মার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে এ ঘোষণা দেন সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোজাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে সকাল থেকে রাজপথে আন্দোলন করছি। এর আগে আমাদের আশ্বাস দিয়েও কোনো ভূমিকা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাই আমরা শাহবাগ থেকে এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। এরমধ্যে যদি দাবি আদায়ের কোনো ঘোষণা না আসে, তাহলে ২টা ১০ মিনিটেই আমরা সচিবালয়ের দিকে লংমার্চ শুরু করবো। সেখানে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেব এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবো।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, অনতিবিলম্বে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শূন্য পদে নিয়োগ প্রদানসহ চার দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা।

এ সময় সাধারণ ম্যাটস শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আহমাদুল্লাহ মানসুর বলেছিলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হলেও ম্যাটস শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান হয়নি। সব বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে গত ২২ জানুয়ারি চার দফা দাবিতে আমরা ঢাকার শাহবাগে গণজমায়েত করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি পূরণের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ৭ দিন পার হলেও তার দৃশ্যমান কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি আরও বলেছিলেন, যেহেতু মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলো এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সেহেতু আমরা এ কর্মসূচি নিয়েছি। আজকের এই মুভমেন্টের সব দায়ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদকে নিতে হবে।

বর্তমানে সারা দেশে ১৬টি সরকারি ম্যাটস ও প্রায় ২০০টি বেসরকারি ম্যাটস ডিপ্লোমা মেডিকেল ডিগ্রি (ডিএমএ) কোর্স পরিচালনা করে আসছে। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২২ এবং বিএমডিসির সর্বশেষ তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার এবং বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিএমএফ’র সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জন ডিপ্লোমা চিকিৎসক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন।

ম্যাটস শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্তমানে ডিপ্লোমা মেডিকেল কোর্স সম্পূর্ণ করে প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ জনবল কর্মসংস্থানহীন বেকার হয়ে পড়েছেন। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধনের নামে তালবাহানা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য পদ রয়েছে ২৫০০টি।

চার দফা দাবিগুলো হলো– বৈষম্যমুক্ত বাংলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ মোতাবেক উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিতে হবে, অনতিবিলম্বে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শূন্য পদে নিয়োগ প্রধানসহ কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে ম্যাটস সংস্কৃত ডিএমএফ ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন পদ সৃজন করতে হবে, অনতিবিলম্বে চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে পূর্বের মতো এক বছরের ভাতাসহ ইন্টার্নশিপ চালু করে অসংগতিপূর্ণ কোর্স কারিকুলাম সংশোধন করতে হবে এবং প্রস্তাবিত অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল শিক্ষা বোর্ড বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে নতুন বোর্ড গঠন করতে হবে।