দলীয় রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে তৈরি অগণতান্ত্রিক ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ’। এছাড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণ এবং স্থান ভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ততা নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এনডিসি-৩ তৈরি করা, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাতে ‘নিট-জিরো অর্থনীতি’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রোডম্যাপ প্রণয়নসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় জলবায়ু নীতি/পরিকল্পনায় যৌক্তিক সংস্কারের দাবি উপস্থাপনও করা হয় জোটের পক্ষ থেকে।
‘জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার নীতি/পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা এবং এদের বাস্তবায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উপস্থাপন করা হয়। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট- বাংলাদেশ নামের এই জোটটি সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) নেতৃত্বাধীন ৩৯টি নাগরিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত।
সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী ও ‘জলবায়ু ন্যায্যতা জোট বাংলাদেশ’ এর সমন্বয়কারী মো. শামছুদ্দোহা। স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, সুশীলনের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন ফারুক, নাগরিক উদ্যোগের গবেষক ফারহান হোসেন জয়, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন -এর ক্লাইমেট এন্ড রেজিলিয়েন্স বিষয়ক থিমেটিক লিড তামান্না রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপক আহসানুল ওয়াহেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মো. শামছুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের জাতীয় তহবিল ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড- বিসিসিটিএফ’ ও এর আইনি কাঠামো ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট এ্যাক্ট’ -এ দলীয় সরকার, আমলাতন্ত্র ও পেশাজীবিদের আধিপত্য সর্বতোভাবে নিশ্চিত হয়েছে এবং এটি অবাধ দুর্নীতির সুযোগ তৈরী করেছে। বিসিসিটিএফ পরিচালনায় তৈরি ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ডের ১৪ জনই মন্ত্রী, ১ জন সচিব এবং ২ জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। দুইজন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সরকার দলীয় মন্ত্রী/ফান্ড বোর্ডের আমন্ত্রণে বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত হন, যারা প্রকারান্তরে দলীয় সরকারেরই অংশ। ফান্ডের অর্থ বরাদ্দে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বিসিসিটিএফ ও এর আইনি কাঠামোর আমূল সংস্কারের দাবি করেন।
‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাতিলের দাবি জানিয়ে শামছুদ্দোহা বলেন, বিগত সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে এবং তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছিল। বিগত সরকারের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়কারীর একক তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণভাবে বিদেশি পরামর্শকদের দ্বারা এবং কোনো ধরনের অংশীজন আলোচনা ছাড়াই এ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়। এটি দেশের অন্যান্য পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যহীন এবং সর্বতোভাবেই বিদেশী ঋণনির্ভর হয়ে উঠেছে, ফলে এটি দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক না হয়ে দেশকে আরো দেনাগ্রস্ত করবে। পরিকল্পনাটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যেগুলোর কোনটিরই সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে অগণতান্ত্রিক উপায়ে তৈরি ও বিদেশি ঋণ নির্ভর এ পরিকল্পনাটি বাতিল ছাড়া আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প নেই। তিনি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি দেশের ভৌগোলিক ভিন্নতা জনিত ঝুঁকিগ্রস্ততা, বিভিন্ন পেশাজীবী সম্প্রদায় ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিগ্রস্ততার ভিন্নতা পর্যালোচনা করে তৈরী করা হয়নি। ফলে প্রান্তিক এসব জনগোষ্ঠীর বিশেষ অভিযোজন চাহিদা নিরূপিত ও অর্ন্তভুক্ত হয়নি। তিনি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার স্থানীয়করণের এবং অঞ্চলভিত্তিক জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ততা নিরূপণের মাধ্যমে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান।
অধ্যাপক, ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জনবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রণীত নীতি-পরিকল্পনা ও দুর্নীতির সুযোগ চলমান রেখে এবং গতানুগতিক ধারার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কোনোভাবেই সমতা ও ন্যায্যতা-ভিত্তিক জলবায়ু সহনীয়তা অর্জন করা যাবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের আধিক্য ও তীব্রতা পূর্বানুমিত হলেও আমাদের প্রস্তুতি এখনও কতিপয় কাগুজে পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমনকি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এদের বাস্তবায়নে বহুমাত্রিক ঘাটতি লক্ষনীয়। বেশিরভাগ পরিকল্পনা অভিজাত পরামর্শকদের একাডেমিক জ্ঞান এবং জলবায়ু ঝুঁকির অনুমিত ধারণাপ্রসূত।
মো. নাসির উদ্দিন ফারুক বলেন, আমরা দেখেছি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, দুর্নীতি মোকাবেলার কৌশল, অধিকতর ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীতে অর্থায়নের ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল।