কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটিতে হামলায় এক তরুণের মৃত্যু

কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটিতে হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। 

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিমানঘাঁটির কাছে পৌরসভার সমিতিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণের নাম শিহাব কবির নাহিদ (৩০)। তিনি ওই এলাকার প্রবীণ শিক্ষক নাসির উদ্দিনের ছেলে এবং পেশায় ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমিতিপাড়ার পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ হোসেন নামের এক তরুণের সঙ্গে বিমানবাহিনীর একটি তল্লাশিচৌকিতে হেলমেট পরা নিয়ে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এরপর জাহেদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে আধা ঘণ্টা ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিহাবের মা আমেনা খাতুন বলেন, ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় শিহাব ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি মাথায় এসে লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উপড়ে পড়ে মগজ বেরিয়ে আসে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হামলা প্রসঙ্গে ১ নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, উচ্ছেদের সঙ্গে হামলার সম্পৃক্ততা নেই। কারণ, হামলার ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ (২৯) নামের মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণের হেলমেট না পরা নিয়ে। 

তিনি আরও বলেন, গুলিতে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। পরে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যান।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ বলেন, দুপুরে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিহাবের মৃত্যু হয়েছে। আঘাতে তার মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম লেগেছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে, শিহাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে যেতে শুরু করে। পরে কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে সরিয়ে দেন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ঘটনাস্থলে ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী একজনকে বিমানবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় আজ দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারসংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমানবাহিনীর ঘাঁটি ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।