সেঞ্চুরি ছাড়ালো লেবু

নিজস্ব প্রতিবেদক: আর মাত্র এক দিন পর পবিত্র রমজান মাস শুরু। ঠিক তার আগ দিয়ে বাজারে রোজার পণ্যগুলো নিয়ে সেই পুরনো নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ইফতারিতে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সে সব পণ্যের কয়েকটির দাম এক লাফে দ্বিগুন হয়ে গেছে।

রোজার ইফতারে শরবতের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবু। এবার পবিত্র রমজানে সেই লেবুর দামেও এখন সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান কমÑ এমন অজুহাতে বেড়েই চলেছে লেবুর দাম। জাত এবং আকার ভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতাকেই দাম শুনে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

শুধু লেবু নয়, শসা, বেগুনের দামেও লেগেছে আগুন। ধনে পাতা, পুদিনাপাতা, শশা, কাঁচা মরিচ এবং পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে বেশ খানিকটা। এছাড়া মাছ-মাংসের দামেও রমজানের আঁচ পড়েছে। তবে রোজার পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর, ছোলা, চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম এখনো স্থিতিশীল। তবে অস্থিরতা রয়ে গেছে সয়াবিন তেলের বাজারে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট এখনো কাটেনি।

খুচরা বিক্রেতারা লেবুর হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত বলে জানিয়েছেন। রোজায় শরবত তৈরির জন্য লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। এটাকেই সুযোগ হিসেবে নিয়ে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এখন লেবুর মৌসুম নয় বলে দাম বাড়তি থাকা স্বাভাবিক। তবে যতটা বেড়েছে তা স্বাভাবিক নয়।

এদিকে, লেবুর দাম বেশির কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীতে লেবুর চাহিদা কম ছিলো। তখন প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। শীতের পর এখন গরম পড়তে শুরু করেছে। আর শরবতে লেবুর চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু এখন লেবুর মৌসুম না হওয়ায় এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম বাড়তি।

রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষ। তাই সাধারণ ক্রেতারা অনেকটাই চিন্তায় পড়ে যান। ক্রেতারা মনে করেন, কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই।

গতকাল রাজধানীর কমলাপুর এজিবি কলোনী, শাহজাহানপুর ও খিলগাঁও কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো লেবু, শসা এবং বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে এলাচি লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকা। এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেটের শরবতি লেবুর দাম প্রতি হালি ১০০-১২০ টাকা। আর প্রতি হালি কাগজি লেবুর দাম ৭০-৮০ টাকা। লেবুর পাশাপাশি মাল্টার দামও কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে। আজ বিভিন্ন বাজারে এক কেজি মাল্টা ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ইফতারের সময় খাওয়া হয় এমন অন্যান্য ফলের দামও কেজিতে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ইফতারের সময় বহুল ব্যবহৃত দুটি পণ্য বেগুন ও শসার দামও কিছুটা বাড়তি। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে এবং গোল বেগুন ৮০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। রোজায় ইফতারির অন্যতম উপকরণ হলো শসা। বাজারে এখন ৯০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শসা। যা আগে ছিল ৫০ টাকা। অন্যদিকে হাইব্রিড শসা ৫০-৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

লেবু, শসাসহ রমজানের বাজার করতে আসা খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছর রোজার মাস আসলেই অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেÑ লেবু এবং শসা। এভাবে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। রমজান মাসের আগে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এভাবে প্রতিবছর ইফতারের আনুষঙ্গিক পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে থাকে।

সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আড়তে গিয়ে লেবু পাওয়া যাচ্ছে না। আড়ত থেকে লেবু আনার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এক মাস আগেও যে দাম ছিল এখন তার দ্বিগুণ হয়েছে। ওই বিক্রেতা বলেন, আমি ৪ ধরনের লেবু এনেছি। এর মধ্যে একটি জাতের আকার সবচেয়ে বড়। সেটি কিনতে হয়েছে হালি ১০০ টাকা। লম্বা বড় জাতের লেবুর হালি ৮০ টাকা। আর ছোট-মাঝারি আকৃতির লেবুর হালি ৬০ টাকা। এটিই সর্বনিম্ন দাম। সবচেয়ে ছোট লেবুও ১৫ টাকা পিস হিসেবে পাইকারি মার্কেটে দাম চেয়েছে। আমাদের কিছুই করার নেই। প্রতিবছরই রোজার শুরুতে এরকম বাড়তি দাম থাকে।

লেবুর বাড়তি দাম নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে আয়শা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার বাজার করতে এসেছি। এখন লেবু কিনতে এসেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভালো মানের লেবুর হালি ৮০ টাকা চাচ্ছে। আর সাইজে বড়গুলো ১০০ টাকা চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে ৮০ টাকায় এক হালি নিতে হলো। দাম কমলে আবার নেবো। রমজান মাসজুড়ে লেবুর বাড়তি দাম থাকলে শরবতের ক্ষেত্রে লেবুর বদলে অন্য উপাদানের শরবতে প্রাধান্য দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা ছিল। একইভাবে সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ২৮০-৩১০ টাকা হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরুতে বেশি সংখ্যায় ক্রেতারা মুরগি কেনেন, এ কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।

মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই দাম সপ্তাহখানেক আগে কিছুটা কম ছিল। আর কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। গতকাল এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১০৫০-১১০০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, রমজানের শুরুতে অনেকে বেশি পরিমাণে মুরগি কিনে রাখেন। যে কারণে এ সময়টাতে চাহিদার সঙ্গে দাম বাড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়।

বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন কেনা যাচ্ছে ১০৫-১৪০ টাকায়। রমজানের প্রতিদিনের আইটেম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০৫-১১০ টাকা। একই সঙ্গে খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকা ও মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাস দুই আগে চিনির দাম উঠেছিল ১২৫-১৩০ টাকায়। এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এ বিক্রেতা।

রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়ি ৯০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরও এমন দাম ছিল বলে জানান বিক্রেতারা। চিড়া প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, নরম গুড় ১৮০ টাকা ও শক্ত গুড় ১৪০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আমদানি করা ফলের মধ্যে খেজুরের চাহিদা রমজান মাসে অনেকটাই বেড়ে যায়। সাধারণ মানের খেজুর কেজিপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা এবং ভাল মানের খেজুর ৭০০-১৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া টমেটো ৩০-৪০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা ও গাজর ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে।