বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশ চলতে হবে, আইনানুগ সুশাসনের মাধ্যমে। কোনো অবস্থাতেই ভাববেন না আপনার ইচ্ছার প্রতিফলনেই বাংলাদেশ চলবে। বাংলাদেশ চলবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন আর তার সংবিধানের আলোকে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের একটি হলে জিয়া পরিষদ, ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে চাইলে বইয়ে-কিতাবে (সংবিধানে) যা লেখা আছে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। অমুককে আসতে দিবেন না, অমুককে দেখলে দৌঁড়ে গলা চেপে ধরবেন, এভাবে দেশ চলে না।
ডা. জাহিদ বলেন, ১৯৭১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু তিনি তো ১৬ ডিসেম্বর বলেননি আমরা যেভাবেই বলবো সেটাই সরকার। তিনি ডিসিপ্লিন মানুষ ছিলেন, ব্যারাকে ফেরত গিয়েছিলেন। তৎকালীন ৭০এর গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা যারা ছিলেন তারাই গণপরিষদ করেছিলেন, সংসদ করেছিলেন। ৯০এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যখন এরশাদের পতন হলো, তখন তো ছাত্রনেতারা বলেননি আন্দোলন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, সুতরাং আমরা যা বলবো তাই হবে। তখন যেই সংবিধান ছিলো সেই সংবিধানের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহাবাউদ্দিন সাহেব দায়িত্বগ্রহণ করে ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ৫২-কে যেমন অস্বীকার করা যাবে না, ৬২-কে অস্বীকার করতে পারবেন না, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে ভুলতে পারবেন না। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমূল্যায়ন করতে পারবেন না, ৭৫-এর ৭ নভেম্বরকে অস্বীকার করতে পারবেন না, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে অবমাননা করতে পারবেন না। ঠিক তেমনিভাবে ২৪-এর জুলাই আন্দোলনকেও কেউ অসম্মান করতে পারবেন না।
ডা. জাহিদ বলেন, দেশ একটি ধারাবাহিক কার্যক্রম। যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন তাহলে আগামী দিনের ভবিষ্যৎও আপনাকে সম্মান করবে। কাজেই অতীত থেকে শিক্ষা নিন, বর্তমানে ভালো আচরণ করুন। আগামীর ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থই হচ্ছে, তারা নির্ধারিত কিছু সময় নিয়ে, নির্ধারিত কিছু দায়িত্বপালনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। মনে রাখতে হবে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচারের দোসররা যে নিষ্ঠুরতা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, লুণ্ঠন করেছে তাদের বিচার যাতে এই বাংলার মাটিতে করা যায় এবং তাদের লুষ্ঠিত সম্পদ যাতে বাংলাদেশে ফেরত আনা যায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য দরকার একটি শক্তিশালী সরকার।
পরে গণমাধ্যমে উপস্থিত কর্মীদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডা. জাহিদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। তাকে ডাক্তাররা বাসায় গিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তিনি দেশবাসীকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখা সভাপতি প্রফেসর ড. সাইফুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা হিসেব উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কয়ছর এম আহমেদ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা জোবায়ের বাবু, জিয়া পরিষদ ইউকের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জিয়া পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি কাওছার ও আহসান উদ্দিন মনির।