নির্ধারিত পরিমাণে ডাউন পেমেন্ট পেলে বেসরকারি বসুন্ধরা গ্রুপকে তাদের খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর বলেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে যথাযথ ডাউনপেমেন্ট জমাসহ সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নরের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের বৈঠকে এমন আলোচানা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী ও কবির আহমেদ। আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষে বৈঠকে যোগ দেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, গভর্নর বসুন্ধরা গ্রুপের ঋণ দ্রুত পুনঃতফসিল করে দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা করতে ডেপুটি গভর্নরদের নির্দেশ দেন ।
বৈঠক সূত্র জানায়, আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, তার চার ছেলের ব্যবসা আলাদা করা। বসুন্ধরাকে আলাদা পাঁচটি ইউনিট করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সেই অনুযাযী থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাদের কোনো ঋণ একক গ্রাহকের সীমা অতিক্রম করেনি।
এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরজেএসসির ফর্ম-১২ অনুযায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে সব প্রতিষ্ঠানে আহমেদ আকবর সোবহানের নাম রয়েছে। যদিও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান স্ব স্ব ব্যক্তির নামে হলেও তা একক গ্রুপ হিসেবে বিবেচিত হবে না। নিয়ম মেনে ঋণ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে হবে।
বৈঠকে গভর্নর বলেন, নিয়ম মেনে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করতে হবে। ডাউন পেমেন্ট দিতে রাজি আছেন, বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পর গভর্নর তাতে সম্মতি দিয়ে ডেপুটি গভর্নরদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করার পরামর্শ তিনি দেন। গভর্নর বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক বা সমস্যায় পড়ুক, বাংলাদেশ ব্যাংক তা চায় না। তবে ব্যক্তির অপরাধের বিচার করা হবে। আর এজন্যই অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আহমেদ আকবার সোবহান বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশেই তারা সম্পদ করেছেন।
তিনি বলেন, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনায় এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের কারণে দেশে -বিদেশে তাদের বিষয়ে একটা খারাপ বার্তা গেছে। অনেকেই মনে করছে, বসুন্ধরা গ্রুপের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি।
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের অর্থপাচার, কর ফাঁকি, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে সরকার গঠিত যৌথ তদন্ত দল।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে তথ্য রয়েছে, বসুন্ধরার গ্রুপ আটটি দেশে প্রায় দুই ডজনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কোনোটি ব্যক্তি কোম্পানি, কোনোটির শেয়ারহোল্ডার রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের নামে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গড়ে তুলেছেন তারা। এ সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক হিসেবে সম্পদ, রিয়েল এস্টেট ও কর্পোরেট কোম্পানি।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ছয়টি কোম্পানির বিনিয়োগ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
এছাড়া দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় একটি ফ্ল্যাট জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত অক্টোবরে আহমেদ আকবর সোবহানসহ পরিবারের ৮ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে বিএফআইইউ।