#সবজিতে স্বস্তি, চড়া মাছ-মাংসের বাজার
রোজা শুরুর দুই দিন আগে থেকেই আগুন লাগে নিত্যপণ্যের বাজারে। হাতেগোনা দু-একটি পণ্য ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের দাম ছিল বাড়তি। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলো দাম হয়ে যায় লাগামহীন। রোজার এক সপ্তাহ পর সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে মাছ-মাংসের বাজার চড়া। এদিকে, রমজান শুরুর আগে থেকেই বাজারে সংকট চলছে সয়াবিন তেলের। সরকারের নজরদারি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান কোনো কিছুই বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারছে না। এই সংকটের জন্য ডিলারদের কারসাজিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দোকানিরা বলছেন, বেশি দামে তেল কিনতে বাধ্য করছেন ডিলাররা। না হলে দুই কার্টন সয়াবিন তেল কিনলে এর সঙ্গে এক কার্টন সরিষার তেল কিনতে বাধ্য করছেন তারা।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে তেল কিনতে বাধ্য। না হলে দুই কার্টন সয়াবিন তেলের বিপরীতে এক কার্টন সরিষার তেল বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। সরিষার তেল না নিলে তাদেরকে সয়াবিন তেল দেয়া হচ্ছে না। কাওরান বাজারের দোকানি জাফর জানান, একটি কোম্পানি নিয়ম করেছে, প্রতি কার্টন তেল নিতে হলে বাধ্যতামূলক ওই কোম্পানির ভিমবারও নিতে হবে। তা না হলে তেল দেবে না। একটি পণ্য নিতে হলে বাধ্যতামূলক অন্য পণ্য কেন নিতে হবে- এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আগে তারা সয়াবিন তেলে অতিরিক্ত দাম নিতে পারত। কিন্তু বর্তমান বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান বেড়ে যাওয়ায় ডিলাররা এ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। এতে করে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা এসে শুধু সয়াবিন তেলের চালান দেখলেও কোনো অনিয়ম তাদের চোখে পড়ছে না। কিন্তু চোখের আড়ালে অনিয়ম হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম লিটার প্রতি ১৭৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের একটি বোতল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা।
সবজিতে স্বস্তিÑ দৈনিক বাংলা মোড়ের সবজি বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। লেবুর দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কম বলে জানান তিনি। কবির বলেন, বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, গাজর ও টমেটোর কেজি যথাক্রমে ৩০ ও ২৫ টাকা। এছাড়া সব ধরনের সবজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আদা কেজি ১২০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। চিনি দাম গত সপ্তাহের মতোই আছে।
চড়া মাছ-মাংসের বাজার
সবজিতে কিছুটা স্বস্তি এলেও দাম কমেনি মাছ-মাংসের। মাঝারি আকারের রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, বড় কাতল ৪শ’ টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২৫০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩৩০ টাকা, তেলাপিয়া আড়াইশ’ টাকা ও শিং মাছ ৬০০-৬৫০’ টাকা, শোল মাছ ৭৫০-৮০০ টাকা, পাবদা ৬০০-৬৫০ থেকে টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ছোটমাছ ৪০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫০০ টাকা, গলদা ৭০০-৭৫০ টাকা’ এবং বাগদা ৮০০’ থেকে ৯০০’ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মুরগি কেজি প্রতি ব্রয়লার ২১০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, দেশি ৬৬০ টাকা ও হাঁস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চড়া আছে গরুর মাংসের বাজারও। রোজার শুরু থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রোজা শুরু আগে মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ টাকা। রোজার শুরু থেকে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা চাকরিজীবী আরিফ বলেন, আমরা যারা ভালো বেতনের চাকরি করি বর্তমান নিত্যপণের যে বাজার তা সামান্য সমস্যা হলেও আমাদের চলে যাচ্ছে, যা সহনীয়। তবে যারা নিম্নআয়ের মানুষ তারা এমন বাজার দরেও অস্তিত্বে আছেন।