নারী, তোমার জন্য…

এমন এক দিনে নারী দিবস এসেছে এবছর, যার ঠিক একদিন আগেই পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আট বছরের ছোট্ট এক মেয়ে। পুরুষটি আবার তার বোনের শ্বশুর, অপরিচিত কিংবা শত্রুপক্ষেরও কেউ নয়! আট বছরের একটি শিশু। কী এমন বুঝতে শিখেছে সে যে এতখানি নিষ্ঠুরতা তাকে এই বয়সে, অতটুকু শরীরে ধারণ করতে হবে? শিশুকে বলা হয় জান্নাতের ফুল। মেয়েশিশুদের গুরুত্ব তো আরেকটু বেশিই। অথচ শিক্ষা-দীক্ষার এত প্রচার, তথ্য-প্রযুক্তির এত প্রসারের পরেও আমরা কেন ফিরে যাচ্ছি সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতে!

নারী দিবস কেন আসে, কী দাবি নিয়ে আসে সে আলোচনা আজ থাক। একটি দিবস দিয়ে কী-ই বা হবে যদি নারীর জীবনটাই অনিরাপদ হয়ে যায়। নিজের ঘরেও তাকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, যত নারী নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসে তার পেছনে পুরুষেরা যেমন থাকে, তেমনই নারীর উপস্থিতিও কম নয়।

ছোট্ট যে আট বছরের শিশুটি ধর্ষিত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, সেই ঘটনার নেপথ্যেও একজন নারীর উপস্থিতি আছে। সেই নারী হলেন ধর্ষকটির স্ত্রী স্বয়ং! ঘটনা জানার পরেও তিনি চেপে গেছেন এবং হাসপাতালে গিয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে গেছেন। অথচ একজন নারী হিসেবে সবার আগে তারই তো পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল! নারীর কষ্ট তো সবার আগে নারীরই বোঝার কথা!

ভাবতে পারেন, গ্রামের অশিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর নারীদের মধ্যে এমনটা ঘটছে। আসল চিত্র আরও ভয়াবহ। শিক্ষিত সমাজেও নারী কর্তৃক নারীর নির্যাতিত হওয়ার চিত্র কম নয়। পুরুষেরা নারীকে বুঝতে পারবে সেই স্বপ্ন তো দিবাস্বপ্নের মতো মনে হয় যেখানে নারীই নারীকে এই চোখে দেখে!

জানি, এগুলো হতাশার কথা। আশার আলো যে একেবারেই নিভে গেছে এমন নয়। ভালোর সংখ্যা এখনও অনেক। অনেক পুরুষ, অনেক নারী একে অন্যের সত্যিকারের সমব্যথী। অনেক নির্যাতিত নারীর পাশে দিন-রাত ভুলে দাঁড়ান অনেক নারী। অনেক পুরুষ নিজের মাতা-কন্যা-জায়া-ভগ্নির মতো করেই আগলে রাখেন আশেরপাশের সব নারীকে। কিন্তু মন্দের সঙ্গে লড়াই করে করে ভালোরাও যেন ক্লান্ত।

তবু সব ধরনের মন্দ মুখের কথা, চোখের দৃষ্টি, শরীরের স্পর্শ থেকে নারীকে রক্ষা করার এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আরও অনেকদিন। তবু আশা জ্বেলে রাখি। অল্প একটু ভালোও যে অনেকখানি আলো ছড়িয়ে দিতে পারে!