তহবিল সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে রোহিঙ্গাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য রেশন ও প্রয়োজনীয় সেবা পুনর্বহাল, তাদের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের পাশাপাশি যথাযথ পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবরপিটিশন দাখিল করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক- খানি বাংলাদেশ।
ফিয়ান ইন্দোনেশিয়া, ফিয়ান সুইজারল্যান্ড, এডাব,এএলআরডি,সিএসআরএল, একশনএইড অস্ট্রেলিয়া, একশনএইড বাংলাদেশ, বারসিক, কোস্ট ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এলায়েন্স, ইনসিডিন বাংলাদেশ, এনজিও ফোরাম অন এডিবি সহ মানবাধিকার, খাদ্য অধিকার ইত্যাদি নানা ইস্যুতে কর্মরত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং স্থানীয় ১১০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিউক্ত পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরখাদ্য রেশন মাথাপিছু মাসিক ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনতে হবে। আকস্মাৎ এই সহায়তা হ্রাসের বিষয়ে খানি বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে, এবংএর ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদ্যমানমানবিকসংকট গভীরতর হতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর দাখিলকৃত এই পিটিশনে বলা হয়, তহবিল ঘাটতি মোকাবেলা করতে, প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পুনরায় চালু করতে এবং দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন শরণার্থীরা ইতিমধ্যেই একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন।
আরো বলা হয়, রোহিঙ্গারা খাদ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, যার কারণে এই সহায়তা বজায় রাখা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন অপুষ্টি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৭ এর পর ২০২৫ সালে এসে ক্যাম্পগুলোতে সর্বোচ্চ অপুষ্টি দেখা দিয়েছে। শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার হার ১৫% ছাড়িয়ে গেছে, এবং গুরুতর তীব্র পুষ্টিহীনতার ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছর জানুয়ারিতে ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, এর পর ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৭% বেড়েছে।
“রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে যতদিন না তারা এই শিবিরে আছেন। যদি এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিবিরে পাচার, গ্রেফতার বা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় জীবনহানির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে, যা ক্যাম্পের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে,” বলেছেন খানি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক, নুরুল আলম মাসুদ।তিনি আরো বলেন, যথাযথ খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেয়ার সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
খানি বাংলাদেশ সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সিদ্দিকি রানা বলেন ‘এই ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গারা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। খাদ্য সহায়তা সীমিত করার অর্থ হবে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি মহা প্রতারণা’।
কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরামের সহ-সভাপতি এবং কোস্ট ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন “সমস্ত ত্রাণ সহায়তার মূল শর্ত হলো খাদ্য। যদি কেউ খেতে না পায়, তাহলে আমরা যতই সুরক্ষা, শিক্ষা বা অন্য সহায়তা দেই না কেন, সেগুলোর কোনো প্রভাব পড়বে না।খাদ্যের পর্যাপ্ততা না থাকলে রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে, শৃঙ্খলা ভেঙে হোস্ট কমিউনিটিতে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হবে এবং এর ফলে শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদি তারা বাইরে গিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করে, তাহলে হোস্ট কমিউনিটির শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান হারাবে। ফলে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
খানি বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জরুরিভাবে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রদানের আহবান জানায়, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক- খানি দেশব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য অধিকার, পরিবেশ-প্রতিবেশ, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে সক্রিয় জাতীয় এবং স্থানীয় পঞ্চাশটিরও বেশি সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক।