অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ৭ মাসে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি এনেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য জানান।
তিনি বলেন, ২৪ সালের জুলাইয়ের ২ তারিখে সংসদে আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য বলেছিল, সিন্ডিকেট ভাঙা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। অথচ, ৭ মাস পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করলেন, দ্রব্যমূল্য কমালেন, রমজানের তীব্র চাহিদার বিপরীতে আনলেন জনমনে স্বস্তি।
তিনি আরও বলেন, একটা দল ঘাপটি মেরে বসেছিলো রমজানে উচ্চ দ্রব্যমূল্য, দ্রব্য সংকট এবং ঘাটতিতে পরলে বগল বাজানোর জন্য। ইন্টেরিমকে হেয় করার জন্য। এদের মুখে চুনকালি দিয়ে দ্রব্যমূল্যকে সহনশীল করে জনমনে স্বস্তি আনতে ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন। দায়িত্ব পাবার পরে ২৩ নভেম্বর বশির সাহেব বলেছিলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য সর্বোচ্চ সহনীয় করার চেষ্টা করব। বশির সাহেব কথা রাখতেছেন।
আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস করার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার ৩৩ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়েছে এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করেছে। এর ফলে আলু ও পেঁয়াজের বাজারদর হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেল স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে তাদের ওপর আরোপণীয় সমুদয় মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন ওজনের রাইস ব্রান তেল উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন সরিষার তেলও উৎপাদিত রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার পরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, অপরিশোধিত পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে আরোপণীয় মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ডিমের আমদানির ক্ষেত্রে আরোপণীয় কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পাঁচ শতাংশ করেছে।
হাসনাত বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক এবং পর্যালোচনার জন্য গত ৭ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক আগস্ট (২০২৪) থেকে অক্টোবর (২০২৪) পর্যন্ত সারাদেশে তিন হাজার ৩৫৩টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাজার অভিযানের মাধ্যমে ছয় হাজার ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে দণ্ডিত করা হয় এবং দণ্ডিত প্রতিষ্ঠান থেকে তিন কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
শেখ বশিরউদ্দীন সাহেবের কিছু সংলাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে কীভাবে অব্যাহত রাখবেন তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। আমাদের শুল্ক কাঠামো, কাস্টমস ডিউটি ঢেলে সাজাতে চান এবং বিনিয়োগ সহজতর করতে চান বশিরউদ্দীন সাহেবে। উৎপাদন খরচ কমাতে চান বিভিন্ন সেক্টরে, আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য চান, যৌক্তিক ও প্রতিযোগিতামূলক দামে আমদানি বাড়াতে চান, বিনোয়াগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। সুন্দর!
তিনি বলেন, পাকিস্তান-তুরস্কের মতো দেশগুলো আমাদের দেশের বাণিজ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় হাব। বশির সাহেব পাকিস্তান-তুরস্কের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বড় করার দিকে আগাচ্ছেন। পর্যটন, এভিয়েশন, শিপিং খাতে তুরস্কের বিনিয়োগ চাচ্ছেন। সুন্দর! বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ড. ইউনুস একজন সৎ, দায়িত্বশীল এবং সফল ব্যবসায়ী খুঁজেছেন। দেশের কুখ্যাত কয়েকজন লুটেরা ব্যবসায়ী ওই পদে নিয়োগ লাভের জন্য নানাভাবে তদবির করেছেন। ড. ইউনুস সাহেব আস্থা রেখেছিলেন শেখ বশির উদ্দিনের উপর। আমরা তখনবশির উদ্দিনের পারিবারিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে সমালোচনা করেছিলাম।
বশির সাহেব কাজ করতেছেন জানপ্রাণ দিয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আস্থার সুন্দর প্রতিদান দিতেছেন। বশির উদ্দিন সাহেবকে উপদেষ্টা নিয়োগের ৩-৪ মাস পর এখন মনে হইতেছে, ইন্টেরিম গভমেন্টের অন্যতম বেস্ট চয়েজ ছিলেন তিনি। অনেক সমালোচনার পরও, কাজের জন্য, সফলতার কারণে প্রশংসা করার একটা কালচার আমরা তৈরি করতে চাই।
শেষে উপদেষ্টা বশির সাহেব আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি লিখেন, আজকে প্রশংসা করছি, ভুল করলে আবারো সমালোচনা করবো। বশির সাহেব, আপনার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা বেড়েছে। ইন্টেরিমের যতদিন থাকবে, অন্তত ততদিন আপনি কিছু দৃষ্টান্ত রেখে যান। আমরা যাতে প্রজন্মের কাছে বলতে পারি, উদাহরণ টানতে পারি। প্রত্যাশার পারদ বাঁড়িয়ে যাচ্ছেন,সেটি অব্যাহত রাখুন। শুভকামনা আপনার জন্য।