বিচার বিভাগ সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার বুধবার (১১ সেপ্টেম্ববর) তাকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ছিলেন বিচার বিভাগের এক সাহসী সৈনিক। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থক তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে বিচার বিভাগ যখন পদলেহনে ব্যস্ত, তখন সব বেড়াজাল ভেঙ্গে এক সাহসী কন্ঠে পরিণত হন এই বিচারপতি। তখনকার সরকারের মাইনাস টু ফর্মূলা থেকে দুই নেত্রীকে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম। দুই নেত্রীকে জামিনও দিয়েছিলেন এই বিচারপতি। অথচ বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়াসহ দুই দফায় প্রধান বিচারপতি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার বঞ্চনা সহ্য করতে হয় এই বিচারপতিকে।
জানা যায়, ওয়ান ইলেভেনে একে এক রাজনীতিবিদরা যখন জেলবন্দী হতে থাকেন তখন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে তিনি সাহসী ভূমিকা দেখান। ২০০৭ সালের ১ অক্টোবরে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি যুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধানী হাইকোর্ট বেঞ্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ জারি করেন। এরপর ২২ নভেম্বর ২০০৭ সালে একই বেঞ্চ দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদের বিবরণী চাওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
২৭ জানুয়ারী ২০০৮ সালে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি শহীদুল ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কেন স্থগিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হবে তা জানতে চেয়ে একটি আদেশ জারি করেন। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এবং বিচারপতি শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজম জে চৌধুরীর করা মামলার কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আজম জে চৌধুরীর করা চাঁদাবাজির মামলায় শেখ হাসিনাকেও এই বেঞ্চ জামিন দেন। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আদেশ দিতে থাকায় এক পর্যায়ে ১৭ মার্চ ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমিন তার বিচারিক ক্ষমতা থেকে কেড়ে নেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ করেন। ২০১০ সালে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল যদিও শাহ আবু নাঈম ছিলেন আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য পরবর্তী সারিতে ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় দফায়ও জ্যেষ্ঠতার লংঘন করে ২০১১ সালে আওয়ামী সরকারের অনুগত বিচারক মোজাম্মেল হোসেনকে দেশের ২০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। দুই বার পদোন্নতি বঞ্চিত করার কষ্টে ২০১১ সালের ১১ মে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোহাম্মদ মমিনুর রহমান তাঁর অবসরে যাওয়ার মাত্র কয়েকমাস আগে পদত্যাগ করেন। বিচার বিভাগের একজন সৎ, মেধাবী ও সাহসী বিচারপতির প্রধান বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে যায় বিগত স্বৈরশাসকের রাজনৈতিক নোংরামী ও স্বৈরাচারী আচরণের কারণে।
বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের জন্ম গাজীপুরে। তিনি ফকির আব্দুল মান্নান শাহের ছেলে। তিনি ১৯৬৫ এবং ১৯৬৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে থেকে স্নাতক এবং স্নাতক পড়াশোনা শেষ করেন। এছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে শাহ আবু নাঈম ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৯ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।